তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশের ফলে সারাবিশ্ব এ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসেছে নতুন নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনা। বর্তমানে কৃষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তার স্পর্শ রাখেনি। এর ছোঁয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিচে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১. বিনিয়োগ: ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিক লেনদেন সহজে ও দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে। মানুষের বিনিয়োগ ক্ষমতা ও সুযোগ বেড়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে কম সময়ে বিনিয়োগ করা এবং অপরদিকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে।
২. কর্মসংস্থান: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিকাশের ফলে নতুন ধরনের পেশা ও সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষত আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে অনেক শিক্ষিত তরুণের কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
৩. আঊটসোর্সিং:কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ নিজেরা না করে তৃতীয় কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে করিয়ে নেওয়াকে আউটসোর্সিংবলে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এখন দেশের শিক্ষিত সমাজের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ এখন এসব মার্কেটপ্লেসে নিজের পছন্দই কাজগুলো খুঁজে নিচ্ছে।
৪. ব্যবসায় উদ্যোগ: অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নতুন উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। একটি উদ্যোগ বদলে দিতে পারে একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। তথ্য প্রযুক্তির সফল ব্যবহার উদ্যোক্তা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। মোটকথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নতুন উদ্যোগের অপর সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
৫. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে কম জনশক্তি দিয়ে অধিক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে কর্মীপ্রতি ব্যয় কমেছে, তদুপরি কর্মীদের কাছ থেকে অনেক বেশি কাজ পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। বিনিয়োগ কম লাগছে এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা সহজ হয়েছে। এতে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখছে।
৬. ক্ষুদ্র ব্যবসায়: অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের ভূমিকা ব্যাপক। বিভিন্ন ধরনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন নতুন ব্যবসার দ্বার উন্মোচন হচ্ছে। ব্যবসায়ের ধরন অনলাইন কিংবা অফলাইন যে কোনোটাই হতে পারে।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে যোগাযোগ ক্ষেত্রে। পূর্বে যোগাযোগের জন্য হয়তো মাসের পর মাস লেগে যেত, সেটা এখন নিমেষেই করা সম্ভব হচ্ছে। বড় বড় ফাইল এখন মুহূর্তের মধ্যেই ট্রান্সফার করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমিয়ে এনেছে। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়ে এসেছে গতিশীলতা, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
৮. শিক্ষা বিস্তার: শিক্ষা হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথ্যকে মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে। ডিজিটাল ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করছে। অনলাইনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা, পরীক্ষা দেয়া কিংবা শিক্ষামূলক বিভিন্ন ওয়েবসাইট হতে শ্ক্ষিা লাভ করা যায়। আর ইন্টারনেট ও কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরে বসে শিক্ষা দেওয়া ও নেওয়ার এই পদ্ধতিটাকে ই-লার্নিং বলে।
৯. ই-গভর্নেন্স: তথ্য প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে সরাসরি সেবাসমূহ কম্পিউটারাইজ্ড ও অনলাইনভিত্তিক হচ্ছে। এতে সরকারের নাগরিক সুবিধা জনগণ সহজেই নিতে পারছে এবং সরকারের জবাবদিহিতা বাড়ছে। দেশের উন্নয়নের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর ই-গভর্নেন্স চালুর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মধ্যে কাজের সুসমন্বয় ঘটানো যায়।
১০. ই-কমার্স: ই-কমার্স হচ্ছে অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় দিক। পণ্য কেনাবেচা ও আর্থিক লেনদেনের ইলেকট্রনিক্স সংস্করণ-এর ফলে অর্থনৈতিক লেনদেন ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় উদ্যোগের পথ সুগম হচ্ছে। ব্যাপক বাণিজ্যিক কার্যক্রম এখন অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে। ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে পন্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করাকে ই-কমার্স বলে।
১১. ই-কৃষি: কৃষি উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। কৃষি বিষয়ে তথ্য, গবেষণা ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। আবহাওয়া, ফসল বপন ও পরিচর্যা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগের তথ্য, রোগবালাই দমন ইত্যাদি কৃষিতথ্য অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কৃষকরা জানতে পারছে। কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকরা সচেতন হচ্ছে, যা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে।
১২. ই-ব্যাংকিং: একটি দেশের আর্থিক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি ব্যাংক ব্যবস্থা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে ব্যাংকিং খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও লেনদেন তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় ব্যাংকের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৩. মোবাইল ব্যাংকিং: দেশে মোবাইল ফোননির্ভর ব্যাংকিং সেবা চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী যাদের স্বাভাবিক ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের সুযোগ নেই, তাদের জন্য সে সেবার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। নিরাপদ ও সহজ আর্থিক লেনদেন সুবিধার কারণে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অর্থ প্রেরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
১৪. নারী উন্নয়ন: তথ্য প্রযুক্তি নারী উন্নয়নে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ঘরে ঘরে তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে ঘরে বসেই নারীরা বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছে, যা তাদেরকে অধিকার বিষয়ে সচেতন করে তুলছে। সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের।
১৫. পরিবেশ সংরক্ষণ: পরিবেশ সংরক্ষণ ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে পরিবেশের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হয়। তথ্য প্রযুক্তি পরিবেশ সংরক্ষণেও অবদান রাখছে। তথ্য প্রযুক্তি পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগেরও সুযোগ সৃষ্টি করছে তথ্য প্রযুক্তি।
প্রথম অধ্যায় লেকচার-২১: সমাজ জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) প্রভাব।
Written by:
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284