পরিপূরক এর আলোচনা :
চিহ্নযুক্ত সংখ্যা: পরিপূরক জানার পূর্বে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা সম্বন্ধে জানতে হবে। চিহ্নযুক্ত সংখ্যা হলো যখন কোন সংখ্যার পূর্বে ধনাত্নত(+) বা ঋণাত্নক(-) চিহ্ন থাকে তখন সেই সংখ্যাকে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা বলে।
চিহ্ন বিট: বাইনারি পদ্ধতিতে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা উপস্থাপনার জন্য প্রকৃত মানের পূর্বে একটি অতিরিক্ত বিট যোগ করা হয়,এই অতিরিক্ত বিটকে চিহ্ন বিট বলে। চিহ্ন বিট 0 হলে সংখ্যাটি ধনাত্নক এবং চিহ্ন বিট 1 হলে সংখ্যাটি ঋণাত্নক ধরা হয়।
ঋণাত্নক সংখ্যার মান জ্ঞাপনের জন্য তিনটি গঠন পদ্ধতি আছে-
১.প্রকৃত মান গঠন।
২.1-এর পরিপূরক গঠন।
৩.2-এর পরিপূরক গঠন।
বর্তমানে ডিজিটাল ডিভাইসে ঋণাত্নক সংখ্যার মান জ্ঞাপনের জন্য 2-এর পরিপূরক ব্যবহার করা হয়। উপরিউক্ত তিনটি পদ্ধতিতে চিহ্ন যুক্ত সংখ্যা উপস্থাপনার জন্য রেজিস্টার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। রেজিস্টার হলো একগুচ্ছ ফ্লিপ-ফ্লপ এবং গেইটের সমন্বয়ে গঠিত সার্কিট যা অস্থায়ী মেমোরি হিসেবে কাজ করে। এর প্রত্যেকটি ফ্লিপ-ফ্লপ একটি করে বাইনারি বিট সংরক্ষণ করতে পারে। n বিটের একটি রেজিস্টার n বিটের বাইনারি তথ্য ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ ৮-বিট রেজিস্টার, ১৬- বিট রেজিস্টার, ৩২-বিট রেজিস্টার ইত্যাদি যথাক্রমে ৮, ১৬, ৩২ বিট তথ্য ধারণ করতে পারে। এই অধ্যায়ের শেষের দিকে রেজিস্টার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৮-বিট রেজিস্টারের ক্ষেত্রে সর্বডানের ৭-বিট হল ডেটা বিট এবং সর্ব বামের বিটটি চিহ্ন বিট। একইভাবে ১৬-বিট রেজিস্টারের ক্ষেত্রে সর্বডানের ১৫-বিট হল ডেটা বিট এবং সর্ব বামের বিটটি চিহ্ন বিট। অর্থাৎ n-bit রেজিস্টারের ক্ষেত্রে সর্বডানের n-1 বিট হল ডেটা বিট এবং সর্ব বামের বিটটি চিহ্ন বিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কখন কত বিট রেজিস্টার ব্যবহার করতে হবে তা নির্ভর করে প্রদত্ত সংখ্যার উপর। যদি একটি সংখ্যার ডেটা বিট ৭ বিটের বেশি হয় তখন ১৬ রেজিস্টার ব্যবহার করতে হবে এবং ডেটা বিট ১৫ বিটের বেশি হলে ৩২ রেজিস্টার ব্যবহার করতে হবে।
1-এর পরিপূরক নির্নয়:
কোন বাইনারি সংখ্যার প্রতিটি বিটকে পূরক করে বা উল্টিয়ে(0 এর জায়গায় 1 এবং 1 এর জায়গায় 0) যে সংখ্যা পওয়া যায় তাকে 1-এর পরিপূরক বলে। 1-এর পরিপূরক গঠন করতে হলে প্রথমে সংখ্যাটিকে রেজিস্টারে উপস্থাপন করতে হয়। যেমন-
12-এর 1-এর পরিপূরক গঠন:
12 ডেসিমাল সংখ্যাটির বাইনারি মান হলো 1100 । সংখ্যাটাকে প্রথমে রেজিস্টারে নিতে হবে। যেহেতু এখানে ৪বিট তাই এটাকে ৮বিট রেজিস্টারে নিতে হবে। ৮বিট রেজিস্টার পূরন করার জন্য যে কয়টি বিট কম পড়বে, বামে শূন্য দিয়ে পূরণ করে নিতে হবে।
১২-এর বাইনারি মান=(1100)2
12-এর ৮বিট রেজিস্টার বাইনারি মান=0 0 0 0 1 1 0 0
1-এর পরিপূরক গঠন =1 1 1 1 0 0 1 1
2-এর পরিপূরক নির্নয়:
কোন বাইনারি সংখ্যাকে 1-এর পরিপূরক বা উল্টিয়ে লিখে তার সাথে বাইনারি 1 যোগ করলে যে সংখ্যা পওয়া যায় তাকে 2-এর পরিপূরক বলে। কোন ধনাত্নক সংখ্যাকে 2-এর পরিপূরক করলে সংখ্যাটির ঋণাত্নক মান পওয়া যায় এবং কোন ঋণাত্নক সংখ্যার 2-এর পরিপূরক করলে সংখ্যাটির ধনাত্নক মান পওয়া যায়। এভাবে কোন ধনাত্নক সংখ্যাকে ঋণাত্নক সংখ্যায় এবং কোন ঋণাত্নক সংখ্যাকে ধনাত্নক সংখ্যায় পরিবর্তন করাকে নিগেশন বা বিপরীতকরন বলে।
2-এর পরিপূরক গঠনের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা:
- 2-এর পরিপূরক গঠনের ফলে বিয়োগের কাজ যোগের মাধ্যমে করা যায়।
- 2-এর পরিপূরক গঠনের ফলে যোগ ও বিয়োগের জন্য একই বর্তনী ব্যবহার করা যায় বিধায় সার্কিটের মাত্রা কমে এবং জটিলতা কম হয়।
- 2-এর পরিপূরক গঠনের ফলে সরল লজিক বর্তনী তৈরি করা যায়,যা দামে সস্তা ও দ্রুত গতিতে কাজ করে।
উদাহরণ-০১: 24-এর 2-এর পরিপূরক গঠন কর।
সমাধান:
যেহেতু চিহ্ন বিট 1 সুতরাং প্রাপ্ত মানটি হবে ঋণাত্নক 24 এর মান।
অতএব, (-24)10=(11101000)2
শিক্ষার্থীর বাড়ির কাজ: 26, 38 ও 19 এর 2-এর পরিপূরক গঠন কর।
2-এর পরিপূরকের যোগ:
নিম্নোক্ত নিয়মগুলি মেনে 2-এর পরিপূরক যোগ নির্নয় করতে হবে। যথা-
- সাধারণ বাইনারি নিয়মে যোগ করতে হবে। অর্থাৎ যে দুটি সংখ্যা যোগ করবো তাদের বাইনারি মান বের করে যোগ করতে হবে।
- ঋণাত্নক সংখ্যাকে 2-এর পরিপূরক করে যোগ করতে হবে।
- চিহ্ন বিটের পরে অতিরিক্ত বিটটি ক্যারি বিট যা বাদ দিতে হবে।
- ফলাফল ঋনাত্নক হলে(চিহ্ন বিট 1 হলে) তা 2-এর পরিপূরক আকারে হয়। (এই ফলাফলকে পূনরায় 2-এর পরিপূরক করলে সংখ্যাটির ধনাত্নক মান পওয়া যায়।)
বি.দ্র.:কোন ঋণাত্নক সংখ্যার বাইনারি মান বের করতে ঐ সংখ্যাটির ধনাত্নক সংখ্যার 2-এর পরিপূরক করতে হবে।
উদাহরণ-০২: +22 ও -14 সংখ্যা দুটি যোগ কর।
সমাধান: সংখ্যা দুটির বাইনারি মান বের করে সাধারন বাইনারিতে যোগ করতে হবে। ঋণাত্নক সংখ্যাটির বাইনারি বের করতে 2-এর পরিপূরক করতে হবে।
+22 এর বাইনারি মান=10110
+22 এর ৮বিট রেজিস্টার বাইনারি মান=00010110
এখন,
যেহেতু চিহ্ন বিট 1 সুতরাং প্রাপ্ত মানটি হবে ঋণাত্নক 14 এর মান।
অতএব, (-14)10=(11110010)2এবার +22 ও -14 এর বাইনারি মানকে যোগ করতে হবে-
অতএব, নির্ণেয় যোগফল=(00001000)2 বা 8 (Ans.)
শিক্ষার্থীর বাড়ির কাজ:
১. +42 ও -28 সংখ্যা দুটি পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ কর।
২. +19 ও -34 সংখ্যা দুটি পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ কর।
৩. -18 ও -23 সংখ্যা দুটি পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ কর।
৪. +26 ও +22 সংখ্যা দুটি পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ কর।
2-এর পরিপূরকের বিয়োগ:
2-এর পরিপূরকের বিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়মগুলি মানতে হবে।
- বিয়োজ্য সংখ্যাটির চিহ্ন পরিবর্তন করে বিয়োজকের সাথে যোগ করতে হবে।(অর্থাৎ + থাকলে – অথবা – থাকলে + )
- ঋণাত্নক সংখ্যাকে 2-এর পরিপূরক করে যোগ করতে হবে।(এক্ষেত্রে যোগ করে বিয়োগের কাজ করা হয়)
- চিহ্ন বিটের পরে অতিরিক্ত বিটটি ক্যারি বিট যা বাদ দিতে হবে।
উদাহরণ-০৩: +28 থেকে +16 কে 2-এর পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ কর।
সমাধান: বিয়োগ=(+28)-(+16)
=(+28)+(-16)
এখানে, বিয়োজ্য সংখ্যা +16 এর চিহ্ন পরিবর্তন হয়ে -16 হয়েছে। এখন, +28 ও -16 যোগ করলেই নির্ণেয় বিয়োগের ফলাফল পওয়া যাবে।
+28 এর বাইনারি মান=11100
+28 এর ৮বিট রেজিস্টার বাইনারি মান=00011100
এখন,
যেহেতু চিহ্ন বিট 1 সুতরাং প্রাপ্ত মানটি হবে ঋণাত্নক 16 এর মান।
অতএব, (-16)10=(11110000)2এবার +28 ও -16 এর বাইনারি মানকে যোগ করতে হবে-
ক্যারিবিট বিবেচ্য নয় সুতরাং ক্যারিবিট বাদ।
অতএব, নির্ণেয় বিয়োগফল=(00001100)2 বা 12 (Ans.)
শিক্ষার্থীর বাড়ির কাজ:
১. -15 থেকে -28 পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ কর।
২. -25 থেকে +12 পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ কর।
৩. -37 থেকে -18 পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ কর।
৪. 2-এর পরিপূরক পদ্ধতিতে (1101)2 থেকে (1001)2 বিয়োগ কর।
৫. রহিমের বয়স 22 বছর এবং করিমের বয়স 34 বছর। রহিম ও করিমের বয়সের পার্থক্য পরিপূরক পদ্ধতিতে নির্ণয় কর।
৬.আবিরের বয়স (11001)2 বছর এবং তার বাবার বয়স (56)10 বছর। আবির ও তার বাবার বয়সের পার্থক্য পরিপূরক পদ্ধতিতে নির্ণয় কর।
৭.আসিফের জন্মসাল 1810 এবং মৃত্যু সাল 1882 হলে আসিফ কত বছর জীবিত ছিলেন তা পরিপূরক পদ্ধতিতে নির্ণয় কর।
তৃতীয় অধ্যায় লেকচার-০৩: বিভিন্ন সংখ্যা পদ্ধতির মধ্যে যোগ ও বিয়োগ।
Written by:
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284