ক্লাউড কম্পিউটিং(Cloud Computing)
ইন্টারনেট বা ওয়েবে সংযুক্ত হয়ে কিছু গ্লোবাল সুবিধা যেমন-বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স শেয়ার, কম্পিউটিং সেবা, সার্ভার, ডেটা স্টোরেজ, সফটওয়্যার প্রভৃতি ভোগ করার বিশেষ পরিসেবাকে ক্লাউড কম্পিউটিং বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ক্লাউড কম্পিউটিং এমন একটি কম্পিউটিং প্রযুক্তি যা ইন্টারনেট এবং কেন্দ্রীয় রিমোট সার্ভার ব্যবহারের মাধ্যমে ডেটা এবং এপ্লিকেশনসমূহ নিয়ন্ত্রন ও রক্ষনাবেক্ষণ করতে সক্ষম।
উদাহরণ: কয়েকটি জনপ্রিয় ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশন হলো- Apps, One Drive, One Note, Dropbox, Google Cloud, Amazon Web Services ইত্যাদি।
১৯৬০ সালে প্রথম ক্লাউড কম্পিউটিং এর ধারণা দেন জন ম্যাক ক্যার্থি(John McCarthy), তিনি বলেন-“কম্পিউটেশন একদিন সুসংগঠিত হবে পাবলিক ইউটিলিটি হিসেবে”। তবে প্রকৃতপক্ষে এর ধারণা ১৯৯০ সালে ভিত্তি লাভ করে। Amazon তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইউটিলিটি কম্পিউটিং এর ভিত্তিতে ২০০৫ সালে সার্ভিস শুরু করে। ২০০৭ সালে Google এবং IBM যৌথভাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সাথে নিয়ে ক্লাউড কম্পিউটিং গবেষণাধর্মী প্রজেক্ট শুরু করে এবং ২০০৮ সালে একটি পর্যায়ে আসে। এর পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ক্লাউড কম্পিউটিংকে। আইবিএম, মাইক্রোসফট, গুগল থেকে শুরু করে প্রচুর কোম্পানি এখন ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবসার সাথে জড়িত।
ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবাটির নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। যথা-
১.Resource Flexibility/Scalability(যত চাহিদা তত সার্ভিস): ক্রেতা যতো চাবে, সেবাদাতা ততোই অধিক পরিমাণে সেবা দিতে পারবে।
২.On Demand(যখন চাহিদা তখন সার্ভিস): ক্রেতা যখন চাবে তখনই সেবা দিতে পারবে। ক্রেতা যে কোন সময় চাহিদা বাড়াতে-কমাতে পারবে।
৩.Pay as you go(যখন ব্যবহার তখন মূল্যশোধ): ক্রেতাকে আগে থেকে কোন সার্ভিস রিজার্ভ করতে হবে না। ক্রেতা যা ব্যবহার করবে, তার জন্যই কেবল পয়সা দেবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদ :
ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা প্রদানকারী কোম্পানিতে সাধারণত ৪ ধরনের ক্লাউড সেবা দিয়ে থাকে। যথা-
১.পাবলিক ক্লাউড(Public Cloud): যে ক্লাউড সিস্টেমের সুবিধা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নেওয়া হয় তাকে পাবলিক ক্লাউড বলে। সাধারণত যে কেউ পাবলিক ক্লাউডের সার্ভিস ভাড়া নিতে পারে। যেমন- Google, Amazon এবং Yahoo ইত্যদি।
২.প্রাইভেট ক্লাউড(Private Cloud): কোন কোম্পানি তার নিজের ব্যবহারের জন্য যদি একটি ক্লাউড স্থাপন করে তাকে প্রাইভেট ক্লাউড বলে। সাধারণত ব্যাংকগুলো তাদের ডেটা রাখার জন্য প্রাইভেট ক্লাউড স্থাপন করে।
৩.হাইব্রিড ক্লাউড(Hybrid Cloud): পাবলিক ক্লাউড ও প্রাইভেট ক্লাউডকে একত্রে হাইব্রিড ক্লাউড বলে। এখানে প্রথমত প্রাইভেট ক্লাউড ব্যবহার করা হয় তবে প্রাইভেট ক্লাউডের ধারণক্ষমতা অতিক্রান্ত হলে তখন পাবলিক ক্লাউড ব্যবহার করা হয়।
৪.কমিউনিটি ক্লাউড(Community Cloud): কোন কমিউনিটির অন্তর্গত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাদের একই ধরনের ক্লাউড সুবিধার প্রয়োজন এবং একটি নির্দিষ্ট ক্লাউড ব্যবহার করে তাকে কমিউনিটি ক্লাউড বলে।
সার্ভিসের ভিত্তিতে ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা তিন প্রকার। যথা-
১.অবকাঠামোগত সেবা(Infrastructure-as-a-Service-IaaS):এই ধরণের সেবায় অবকাঠামো বা Infrastructure ভাড়া দেওয়া হয়। অর্থাৎ ভার্চুয়াল মেশিন, ভার্চুয়াল স্টোরেজ ইত্যাদির মতো মৌলিক রিসোর্সসমূহের অ্যাক্সেস সরবরাহ করে। ক্লায়েন্ট ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া নেয় এবং সেই মেশিনে নিজের ইচ্ছামতো সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারে। এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার এর মতই কাজ করে এবং সিস্টেমের পুরো নিয়ন্ত্রণ ক্লায়েন্ট এর হাতে থাকে। অর্থাৎ ক্লায়েন্ট নিজের মত করে সেই মেশিনে দরকারী কাজ করতে
২.প্লাটফর্মভিত্তিক সেবা(Platform as a Service-PaaS):খানে সরাসরি ভার্চুয়াল মেশিন ভাড়া না দিয়ে রানটাইম পরিবেশ সরবরাহ করে, যার উপর ভিত্তি করে ব্যবহারকারী অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারে। ক্লাউড প্রোভাইডার এখানে ভার্চুয়াল মেশিনগুলোর উপরে আরেকটি লেয়ার যোগ করতে পারে। ব্যবহারকারী Application Programming Interface-API ব্যবহার করে এই প্ল্যাটফর্ম লেয়ারের নানা সার্ভিস কনফিগার ও ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হল, উক্ত সিস্টেম, ডেটাবেজ কিংবা এপ্লিকেশান এর নিয়ন্ত্রণ ইউজারের কাছে থাকবে না, যেটা শুধু অবকাঠামো বা Infrastructure সেবায় ছিল। গুগলের অ্যাপ ইঞ্জিন এর একটা উদাহরণ।
৩.সফটওয়্যার সেবা(Software as a Service-SaaS):ই ব্যবস্থায় ক্লাউড সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ডেভেলোপ করা অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহারকারীকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করতে দেয়। সাধারণত একটি সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের পূর্বে ক্রয় করতে হয় এবং কম্পিউটারে ইনস্টল করতে হয়। অন্যদিকে SaaS ব্যবহারকারীরা সাধারণত সফটওয়্যারটি ক্রয়ের পরিবর্তে মাসিক ভিত্তিতে সাবস্ক্রাইব করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করেন।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা:
১.ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে অপারেটিং খরচ কমানো সম্ভব।
২.খুব কম মূল্যে প্রায় আনলিমিটেড স্টোরেজ সেবা রপাওয়া যায়।
৩.সফটওয়্যার গুলো আপডেট করার প্রয়োজন হয় না, অটো আপডেট হয়।
৪.আলাদা কোন সফটওয়্যার কেনার প্রয়োজন হয় না বিধায় খরচ কম হয়।
৫.ক্রেতা যা ব্যবহার করবে, তার জন্যই কেবল পয়সা দেবে।
৬.ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পূর্ণ নিরাপদ তাই ডেটা হারানো বা নষ্ট হওয়ার কোন ভয় নেই।
৭.এটি নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনা করা সহজ।
৮.নিজস্ব কোন হার্ডওয়্যার প্রয়োজন হয় না।
৯.এটি সব সময় ব্যবহার করা যায়।
১০.যে কোন জায়গায় বসে ল্যাপটপ বা মোবাইলের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায়।
১১.রিসোর্স শেয়ারের মাধ্যমে খরচ কমানো যায়।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর অসুবিধা:
১.সার্ভার ডাউন হলে তখন সার্ভিস পাওয়া যায় না।
২.নির্ধারিত সময় পরপর ফি প্রদান করতে হয়,না দিলে সার্ভিস বন্ধ করে দিলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
৩.সাধারণত কর্মীদের প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হয়।
৪.ইন্টারনেট ভিত্তিক সার্ভিস হওয়ায় ইন্টারনেট কানেকশন সমস্যা হলে অনেক সমস্যা দেখা দেয়।
৫.স্টেরেজের সীমাবদ্ধতা থাকে।
৬.বড় ফাইল অপলোড বা ডাউনলোড ধীরগতির হতে পারে।
৭.ডেটা, তথ্য অথবা প্রোগ্রাম বা অ্যাপলিকেশন এর উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
যে কোন প্রশ্ন করতে আমাদের ফোরামে যোগ হউন
Written by:
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284