লেকচার-৩: বিশ্বগ্রামের ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানসমূহ-যোগাযোগ

যোগাযোগ(Communication)

তথ্যের আদান-প্রদান বা বিনিময়কে বলা হয় যোগাযোগ বা communication । যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যক্তি পরস্পরের সাথে কম খরচে দ্রুতগতিতে যোগাযোগ করতে পারে তাকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।

উইকিপিডিয়া অনুসারে-Communication is that the act of conveying meanings from one entity or group to a different throw the utilization of mutually understood signs,symbols and semiotic rules.

  • বর্তমানে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
  • সড়কপথ,রেলপথ,জলপথ এবং আকাশপথে যোগাযোগকে অনেক সহজ,দ্রুততর ও লাভজনক করে তুলেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে সময়,অর্থ ও শ্রমের অপচয় রোধ হওয়ার পাশাপাশি আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সংরক্ষিত হচ্ছে।
  • টেলিফোন,ফ্যাক্স,টেলিভিশন,টেলিপ্রিন্ট,কম্পিউটার, ই-মেইল,সাটেলাইট ও সিসি ক্যামেরার দ্বারা বর্তমোনে যোগাযোগ আরো বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

যোগাযোগ ‍বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- মৌখিক যোগাযোগ, লিখিত যোগাযোগ ও অবাচনিক যোগাযোগ।

 

বর্তমানে ব্যবহৃত জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ :

ক.মোবাইল কমিউনিকেশন:

গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রামের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো বিশ্বের সকল মানুষ সবসময় যেন একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে । আর এটিকে সম্ভব করে তুলেছে মোবাইল কমিউনিকেশন(Mobile Communication)।
Mobile Communication

মোবাইল কমিউনিকেশনের সুবিধাসমূহ

১. SMS বা ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
২.মাল্টিমিডিয়া ম্যাসেজ প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
৩.গান শোনা ও ভিডিও দেখা যায়।
৪.ইমেইল গ্রহণ ও প্রেরণ করা যায়।
৫.ভিডিও কল করা যায়
৬.ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটিং করা যায়
৭. Audio ও Video রেকর্ড করা যায় ও ছবি তোলা যায়।
৮. ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়
৯.ব্লুটুথ ও শেয়ারইট এর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
১০. জিপিএস সুবিধা উপভোগ করা যায়।

 

জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (Global Positioning System-GPS)

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস হলো এমন একটি স্যাটেলাইটনির্ভর একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে কোনো স্থানের অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায়। তথ্য প্রযুক্তির এ উৎকর্ষিত প্রযুক্তির ফলে এখন মোবাইলের মাধ্যমে যে কোনো বস্তু বা যে কোনো ব্যক্তির অবস্থান যথাযথভাবে নির্ণয়, ট্রাকিংসহ আরও নানা সুবিধা উপভোগ করা যায়।

জিপিএস প্রতিনিয়ত স্যাটেলাইট থেকে তথ্য গ্রহণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন সার্ভারে প্রেরণ করে। বর্তমানে GPS রিসিভারগুলো তথ্য গ্রহণ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সঠিক তথ্য প্রদান করে। গাড়ি, জাহাজ, অ্যারোপ্লেন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ আধুনিক অধিকাংশ ডিভাইসে জিপিএস রিসিভার সংযুক্ত থাকে।

GPS ব্যবস্থা নির্ভর বাংলাদেশের  জনপ্রিয় সেবাগুলোর মধ্যে একটি হলো ট্রেনের অবস্থান নির্ণয় করতে পারা। নির্দিষ্ট মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে মেসেজ পাঠিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভ্রমণরত অবস্থায় যে কোনো ট্রেনের সুনির্দিষ্ট ও নির্ভুল অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এর ফলে ট্রেনের প্যাসেঞ্জাররা এ অনুযায়ী স্টেশনে গমন করতে পারে। জনপ্রিয় এ সেবাটি বাংলাদেশের গ্রামীণ ফোন ও রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রদান করা হয়ে থাকে।

GPS যেভাবে অবস্থান নির্ণয় করে-

জিপিএস সেবা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের এমন একটি সমন্বিত স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম স্থাপন করে যাতে করে এই স্যাটেলাইটগুলো ৬টি অরবিটে দিনে দুবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারে এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় কমপক্ষে এর চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হতে পারে।

এ স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত L1 ও L2 নামক দুই ধরনের সংকেত প্রেরণ করে যাচ্ছে, যার মধ্যে L1 হলো বেসামরিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত। সংকেতগুলো প্রেরিত হয় আলোর গতিতে এবং এদের প্রতিটির সেন্ডিং টাইম লেখা থাকে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের জিপিএস রিসিভার একাধিক স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত সংকেতগুলো গ্রহণ করার পর এদেরকে গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে থাকে।

 

খ.ডিজিটাল টেলিফোন:

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল টেলিফোন সার্ভিস ও সিস্টেমের সুবিধা সংবলিত ফোনই ডিজিটাল টেলিফোন। বর্তমানে মোবাইল ফোনের কারনে গ্রাহকরা ডিজিটাল ফোনের প্রতি ক্রমশ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অফিস আদালতে এখনো এই ডিজিটাল ফোন লক্ষ করা যায়।
Digital Phone communication

 

ডিজিটাল ফোনের সুবিধাসমূহ

  • এনালগ ফোনের চেয়ে এর দক্ষতা বেশি
  • আন্তর্জাতিক ও ওয়াইড এরিয়া রোমিং সুবিধা পওয়া যায়
  • পরিবেশ বান্ধব ও দীর্ঘ সময়ে ব্যবহারেও নষ্ট হয় না
  • এর নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি অনেক বেশি
  • খরচ অনেক কম

গ.স্যাটেলাইট:

স্যাটেলাইট শব্দের অর্থ হলো উপগ্রহ। মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত মানুষের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহকে স্যাটেলাইট বলে। স্যাটেলাইট পৃথীবিপৃষ্ট থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কি.মি.(৩৫৭৮৬ কি.মি. বা ২২২৩৬ মাইল) উপরে জিওসিনক্রোনাস নামক স্থানে স্থাপন করা হয়। যা পৃথীবিকে একবার প্রদক্ষিন করতে ২৪ ঘন্টা সময় নিয়ে থাকে।

ঘ. ইন্টারনেট(Internet) :

Internet শব্দটি এসেছে International Network থেকে। ইন্টারনেট হলো সারা পৃথীবি জুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা অদান-প্রদান হয়।
ইন্টারনেটের উপাদান হলো-

১.ইন্টারনেট ব্যবহারকারী

২. তথ্য

৩. টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা

৪.কম্পিউটার/অনূরুপ ডিভাইস
Internet Communication

ইন্টারনেটের সুবিধাসমূহ-

ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিম্নরূপ-

১.ইন্টারনেট হলো তথ্যের বিশাল ভান্ডার। ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে কাক্সিক্ষত তথ্যের নাম লিখে সার্চ করলেই বিশ্বের অসংখ্য সার্ভারে থাকা তথ্যগুলো প্রদর্শিত হয়।
২.ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ই-মেইল করে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
৩.ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্যাক্স সুবিধা পাওয়া যায়।
৪.VOIP এর মাধ্যমে প্রচলিত ফোনের চেয়ে খুব কম খরচে বা বিনা খরচে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কথা বলা যায়।
৫.ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘওে বসেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।
৬.বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ফ্রিওয়্যার, বিনোদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যায়।
৭.সংবাদপত্র ও পত্রপত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণ প্রকাশিত হবার ফলে এখন ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পড়া যায়।
৮.ই-কমার্সের সাহায্যে ঘরে বসেই পণ্য কেনা-বেচা যায়।
৯.ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
১০.ভাইবার, হোয়াটসআপ, ম্যাসেঞ্জার, গুগল টক, স্কাইপি ইত্যাদি ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা যেকোনো ব্যক্তির সাথে টেক্সট ও ভিডিও শেয়ার করা যায়।
১১.অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নেয়া যায়।
১২.গুগল ম্যাপস এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানের স্যাটেলাইট মানচিত্র দেখে ওই স্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ওইসব স্থানের ছবি জুম করে (বড় করে) খুব কাছে থেকেও দেখা যায়।

 

ইন্টারনেটের সুফল

১.শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের পাঠ্যক্রমের বিষয়ে নানা সহযোগিতা পেতে পারে। ইন্টারনেট থেকে শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও ব্যাখামূলক তথ্য আহরণ তাদের ফলাফল উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
২.ইন্টারনেট চাকুরিজীবীদের জন্য কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, অধিক উপার্জন, সময় সাশ্রয়ী প্রভৃতি সুফল প্রদান করে।
৩.ব্যবসায়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাণিজ্যিক বিপণন, সরবরাহ, প্রচার প্রভৃতি বিষয়কে সাশ্রয়ী ও গতিশীল করে তোলে।
৪.বর্তমানে যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ইন্টারনেটের ব্যবহার অপরিহার্য।

 

ইন্টারনেটের কুফল

১.ইন্টারনেটে অনলাইন গেমস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাহীন আড্ডা, কুরুচিপূর্ণ বিষয়ের চর্চা প্রভৃতি বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনযোগ ও সময় নষ্ট করে বলে তার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
২.অনলাইনে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবার মান সর্বদা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় বা ক্ষতির হবার সম্ভাবনা থাকে।
৩.ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে হ্যাকিং, ভাইরাস বা মেলওয়্যার সংক্রমণ, স্প্যামিং প্রভৃতি আক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
৪.দীর্ঘসময় ইন্টারনেট ব্যবহারে ইন্টারনেট আসক্তির সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে ব্যবহারকারীন নানা ধরনের স্বাস্থ্যহানি শিকার হতে থাকে এবং মানুষের পারিবারিক জীবনে ব্যাপক দূরত্বের সৃষ্টি হয়।
৫.ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো সংবাদ খুব দ্রæত ভাইরাল আকাওে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে কোনো ভুয়া বা ভুল সংবাদ ভাইরাল হবার ফলে তা সামাজিক অস্থিরতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ব্যক্তিগত হয়রানির মতো বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে।

 

ঙ.ই-মেইল(E-mail)

ই-মেইল এর পূর্ণরুপ হলো ইলেকট্রনিক মেইল(Electronic Mail) । ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যভাবে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে বার্তা আদান-প্রদান করার ব্যবস্থাকে ই-মেইল বলে। ইমেইল তথ্য আদান-প্রদানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল ব্যবহার করে থাকে। ইমেইলের মাধ্যমে টেক্সট বার্তাসহ ডকুমেন্ট, ছবি, অডিও-ভিডিওসহ যে কোন ডিজিটাল ফাইল আদান-প্রদান করা যায়।

Email communication
ইমেইলের উৎপত্তি ও এর জনক : আমেরিকার কম্পিউটার প্রোগ্রামার ”রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন” ই-মেইল এর সূচনা করেন। তিনি সর্বপ্রথম অরপানেট (ARPANET) এর মাধ্যমে এক হোস্ট কম্পিউটার থেকে অন্য হোস্ট কম্পিউটারে ইমেইল প্রেরণ করেন । তিনি ই-মেইলে @ চিহ্ন ব্যবহার করেন। ”রেমন্ড স্যামুয়েল টমলিনসন” কে ইমেইলের জনক বলা হয়।

ই-মেইল এর ঠিকানা:একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস এর দুটি অংশ থাকে । প্রথম অংশটি হলো ব্যবহারকারীর পরিচিতি এবং দ্বিতীয় অংশটি হলো ব্যবহারকারীর প্রতিষ্ঠানের নাম। দুটি অংশের মাঝে থাকে @ চিহ্ন। যেমন-habibictcare@gmail.com এখানে habibictcare হলো ব্যবহারকারীর পরিচিতি এবং gmail.com হলো ব্যবহারকারীর প্রতিষ্ঠানের নাম।

 

ই-মেইল আদান-প্রদানের জন্য যা যা প্রয়োজন তা নিচে তুলে ধরা হলো-

১. একটি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন বা অনুরূপ ডিভাইস।
২. ইন্টারনেট সংযোগ (Internet Connectivity)।
৩. E-mail এ বার্তা তৈরি, এডিট, গ্রহণ ও প্রেরণসহ ই-মেইল ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার। যেমন- জিমেইল এবং ইয়াহু মেইল।
৪. প্রেরক ও প্রাপকের ই-মেইল(E-mail) অ্যাড্রেস।

 

ই-মেইলের সুবিধাসমূহ (Advantages of E-mail)

১.ব্যবহার করা সহজ। সহজে পাঠানো যায় ও গ্রহণ করা যায় এবং কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
২.সবচেয়ে দ্রুত। মুহুর্তেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে পাঠানো যায়।
৩.ই-মেইলের ভাষা সহজ।
৪.কোনো গ্রুপ লোকজনের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়।
৫.ই-মেইলের সাথে এটাচ করে অন্য প্রোগ্রাম বা ফাইল (লেখা, অডিও, ভিডিও) পাঠানো যায়।
৬.একই মেইল সিসি করে অনেকের কাছে পাঠানো যায়।
৭.কাগজের ব্যবহার হয় না বিধায় পরিবেশের জন্য সহায়ক।
৮.ই-মেইলের মাধ্যমে সহজেই খুব কম খরচে কোন প্রোডাক্ট মার্কেটিং করা যায়।
৯.সাধারণ প্রাপ্ত মেইলের বিপরীতে স্বয়ংক্রিভাবে কোনো উত্তর পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়।

 

ই-মেইলের অসুবিধাসমূহ

১.গ্রাহকের জন্য ই-মেইল গ্রহন করতে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়।
২. ই-মেইলের সাথে ভাইরাস ফাইল সংযুক্তি হিসেবে আসতে পারে।
৩.ফিশিং এর মাধ্যমে কোন ব্যক্তির তথ্য চুরি করা সম্ভব।
৪. ই-মেইল স্প্যাম তথা জাঙ্ক ই-মেইল হতে পারে।

 

চ.টেলিকনফারেন্সিং

বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরুতে অবস্থান করে টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি যেমন টেলিফোন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করে দুই বা ততোধিক ব্যাক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ বা সভা কার্যক্রম পরিচালনা করার কৌশল হলো টেলিকনফারেন্সিং। টেলিকনফারেন্সিং ব্যবস্থায় কোনো সভায় সকলকে সশরীরে উপস্থিত না থেকেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে উক্ত সভায় অংশগ্রহন করতে পারে। ফলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয়ী হয়। ১৯৭৫ সালে মরি টারফ এ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
Teleconferencing
টেলিকনফারেন্সিং এর উপাদানসমূহ

১.টেলিফোন সংযোগ বা নেট কানেকশন
২.কম্পিউটার বা অনূরুপ ডিভাইস
৩.অডিও যন্ত্রপাতি ও
৪.প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার

 

ছ.ভিডিও কনফারেন্সিং

বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করে একাধিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অডিও বার্তায় কথা বলার পাশাপাশি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গের পরস্পর সাক্ষাতের পদ্ধতিকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলে।
Video conferancing

ভিডিও কনফারেন্সিং এর উপাদানসমূহ

কম্পিউটারে সাধারনত ভিডিও কনফারেন্সিং করতে যেসকল উপাদান প্রয়োজন তা হলো-ওয়েব ক্যামেরা,ভিডিও ক্যাপচার কার্ড, সাউন্ড কার্ড, স্পীকার,মাইক্রোফোন, মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার,মডেম,টেলিফোন লাইন বা ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি। এবং উক্ত উপাদানগুলির সাথে প্রয়োজনীয় সফট্ওয়্যার। যেমন-

১.Skype (স্কাইপি): এটি ফ্রি ভিওআইপি [ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল] সফটওয়্যার। এ মেসেঞ্জার সফটওয়্যারটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীগণ নিজেদের মধ্যে অডিও ভিডিও চ্যাটিং সুবিধার পাশাপাশি কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে বিনামূল্যে এবং কম্পিউটার থেকে প্রচলিত টেলিফোনে স্বল্পমুল্যে বিশ্বব্যাপী কথা বলতে পারেন। মাইক্রোসফট স্কাইপি ডিভিশন এ সফটওয়্যারটি ডেভেলপ করে।

২.Viber (ভাইবার): ভাইবার (Viber) হলো জাপানিজ কোম্পানি Rakuten কর্তৃক অপারেটকৃত একটি তাৎক্ষণিক বার্তা প্রেরক এবং ভিওআইপি অ্যাপ। ভাইবার এর ব্যবহারকারীকে বিনামূল্যে কথা বলা, এসএমএস আদান প্রদান, ছবি বা ভিডিও আদান-প্রদান, ভিডিও কলিং, গ্রুপ ম্যাসেজিং, লোকেশন শেয়ার প্রভৃতি সুবিধা প্রদান করে। এটি একই সাথে মোবাইল (আইপ্যাড ও অ্যান্ড্রয়েড) এবং কম্পিউটার (উইন্ডোজ ও ম্যাক) উভয় প্ল্যাটফরমেই ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ এক অপরের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে। ভাইবার ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়।

৩.WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ): হোয়াটসঅ্যাপ স্মার্টফোনের জন্য জনপ্রিয় একটি ম্যাসেঞ্জার। হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে চ্যাটসহ, ছবি আদান-প্রদান, ভিডিও অডিও মিডিয়া বার্তা আদান-প্রদান, ভিডিও ও অডিও কলিং প্রভৃতি করা যায়। ম্যাসেঞ্জারটি অ্যাপলের আইওএস, ব্লাকবেরি , অ্যান্ড্রয়েড, সিমবিয়ান ও উইন্ডোজ ফোনে ব্যবহার করা যায়। হোয়াটসঅ্যাপ ২০০৯ সালে জ্যান কউম (Jan Koum) ও ব্রায়ান অ্যাক্টন (Brian Acton) দ্বরা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীব্যাপী হোয়াটসঅ্যাপ এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় বিলিয়ন যা একে বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপে পরিণত করেছে।

৪. Facebook Messenger (ফেসবুক মেসেঞ্জার): ফেসবুক মেসেঞ্জার (সাধারণভাবে মেসেঞ্জার নামে পরিচিত) হলো একটি একটি জনপ্রিয় মেসেঞ্জার এবং প্লাটফরম যা প্রথমে ফেসবুকে চ্যাট করার জন্য ২০০৮ সালে চালু করা হয়। পরবর্তীতে এটি পৃথকভাবে একটি মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে ২০১০ সালে নতুন আঙ্গিকে রিলিজ করা হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ভিওআইপি সফটওয়্যার যার মাধ্যমে ইউজারগণ বিশ্বব্যাপি ফ্রি ম্যাসেজিং, অডিও-ভিডিও কলিং ও চ্যাটিং প্রভৃতি করতে সক্ষম হয়।
৫. Zoom(জুম):জুম হলো বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন ভিডিও মিটিং এর একটি প্লাটফর্ম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জুম ভিডিও কনফারেন্সিং ইঙ্ক. প্রতিষ্ঠান এটি তৈরি করে।
৬. ইমো: ইমো হলো বিশ্বের একটি জনপ্রিয় অ্যাপ যার মাধ্যমে ইউজারগন বিশ্বব্যাপি ফ্রি মেসেজিং ও অডিও-ভিডিও কলিং করতে সক্ষম হয়। এত ইউজার একাউন্ট ভোরফাই করার জন্য ব্যবহারকারীর ফোন নম্বরের প্রয়োজন হয়।
৭. গুগল মিট: এটি হলো জিমেইল একাউন্টধারীদের জন্য বিখ্যাত গুগল কর্তৃক একটি ফ্রি ভিডিও কনফারেন্সিং। এর মাধ্যমে ১০০ জন অংশগ্রহণকারী নিয়ে মিটিং বা ক্লাস পরিচালনা করা যায়। এতে জুমের মতো কোন সময় সীমাবদ্ধতা নেই।

 

ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুবিধাসমূহ

ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো হচ্ছে-

১.যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্ব থেকে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে একেবাওে মুখোমুখি সাক্ষাৎ-এর ন্যায় বার্তালাপ (লাইভ ভিডিও যোগাযোগ) সম্ভব, যা ব্যক্তির সময় ও ভ্রমণ ব্যয় ব্যাপকভাবে সাশ্রয় করে।
২.ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন।
৩.প্রত্যন্ত, দুর্গম এলাকায় অবস্থান করেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা, উন্নত শিক্ষাসহ আরও বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করা যায়।
৪.যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্বে থেকে যে কোনো সভা, সরকারি কর্মকান্ড, অফিসিয়াল মিটিং, রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ যে কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা বা বক্তব্য প্রদান সম্ভব।
৫.যে কোনো ভৌগোলিক দূরত্বে থেকে নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ অবলোপন, কর্মীদেও মনিটরিং, জরুরি অফিসিয়াল সাক্ষাৎ সহ যে কোনো ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব।

 

টেলিকনফারেন্সিং ও ভিডিও কনফারেন্সিং এর মধ্যে পার্থক্য

  টেলিকনফারেন্সিং     ভিডিও কনফারেন্সিং
   ১.বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরুতে অবস্থান করে     টেলিকমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি যেমন টেলিফোন, মোবাইল   ফোন ইত্যাদি ব্যবহার করে দুই বা ততোধিক ব্যাক্তিবর্গের   সাথে যোগাযোগ বা সভা কার্যক্রম পরিচালনা করার   কৌশল হলো টেলিকনফারেন্সিং।     ১.বিভিন্ন ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করে একাধিক   ব্যক্তিবর্গের মধ্যে টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি   ব্যবহার করে অডিও বার্তায় কথা বলার পাশাপাশি ভিডিও বার্তার   মাধ্যমে অংশগ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গের পরস্পর সাক্ষাতের   পদ্ধতিকে ভিডিও কনফারেন্সিং বলে।
   ২.এ ব্যবস্থায় কনফারেন্সিং এ অংশগ্রহণকারীরা শুধু প্রশ্ন   উত্তরের মাধ্যমে কথোপকথন করতে পারে।    ২.এ ব্যবস্থায় কনফারেন্সিং এ অংশগ্রহণকারীরা পরস্পরের   ছবি দেখতে পারে ও কথোপকথন করতে পারে।
   ৩.টেলিফোন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব   সহজেই টেলিকনফারেন্সিং করা যায়।    ৩.ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার   প্রয়োজন। যেমন-মেসেন্জার,স্কাইপি,জুম ইত্যাদি

 

 

লেকচার-২: বিশ্বগ্রামের ধারণা,বিশ্বগ্রামের উপাদানসমূহ, বিশ্বগ্রামের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

Written by,

Habibur Rahman(Habib Sir)
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532, +8801913865284

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *