প্রথম অধ্যায় লেকচার-১০: ক্রায়োসার্জারি(Cryosurgery)

ক্রায়োসার্জারি(Cryosurgery)

গ্রিক শব্দ Cryo অর্থ খুব শীতল এবং surgery অর্থ  হাতের কাজ। অর্থাৎ ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery) হচ্ছে এমন একটা চিকিৎসা পদ্ধতি যার মাধ্যমে অতি ঠান্ডা তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক ও রোগাক্রান্ত টিস্যু বা কোষকে ধ্বংস করা হয়। এ ক্ষেত্রে শীতলীকরন করার জন্য তরল নাইট্রোজেন,কার্বন-ডাই অক্সাইড, আর্গন, তরল অক্সিজেন ও ডাই মিথাইল ইথার-প্রোপেন এবং হিটিং সোর্স হিসেবে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery) চিকিৎসা পদ্ধতিতে যে নল ব্যবহার করে তরল নাইট্রোজেন,কার্বন-ডাই অক্সাইড, আর্গন, তরল অক্সিজেন ও ডাই মিথাইল ইথার-প্রোপেন এবং অন্যান্য ক্রায়োজনিক এজেন্ট প্রবেশ করানো হয় তাকে ক্রায়োপ্রোব বলে।

১৮৪৫ বা ১৮৫০ সালের দিকে ইংরেজ চিকিৎসক জেমস আরনট প্রথম এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৯২০ সালের দিকে ক্রায়োসার্জারিতে তরল অক্সিজেনের ব্যবহার শুরু হয়। এবং ১৯৫০ সালে ড. রে এলিংটন ক্রায়োসার্জারিতে তরল নাইট্রোজেন প্রয়োগ করেন। পরবর্তীতে আধুনিক ক্রায়োসার্জারির পথচলা শুরু হয় ড. ইরভিং কুপার এর হাত ধরে।

 

ক্রায়োসার্জারিতে ব্যবহৃত গ্যাস ও তাপমাত্রা :

১.ডাই মিথাইল ইথার-প্রোপেন (-41০C)
২.তরল কার্বন-ডাই অক্সাইড (-79০C)
৩.তরল নাইট্রাস অক্সাইড (-89০C)
৪.তরল অক্সিজেন (-182.9০C)
৫.হিলিয়াম (-270০C)
৬.তরল নাইট্রোজেন (-195.79০C)
৭.আর্গন (-196০C)

 

ক্রায়োসার্জারিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি :

আলট্রাসাউন্ড, MRI বা কম্পিউটেড টমোগ্রাফি, ক্রায়োপ্রোব, স্প্রে-ডিভাইস এবং কটন বাট।

 

ক্রায়োসার্জারির (Cryosurgery) ব্যবহার :

১. ত্বকের ছোট টিউমার,তিল,আঁচিল,মেছতা এবং ত্বকের ক্যান্সারসমূহের জন্য ক্রায়োসার্জিক্যাল চিকিৎসা দেয়া হয়।
২. বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ শারীরিক ব্যাধি যেমন- লিভার ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, ওরাল ক্যান্সার, সার্ভিক্যাল ব্যাধিসমূহের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
৩. মানবদেহের কোষকলার কোমল অবস্থা যেমন- প্ল্যান্টার ফ্যাসিলিটিজ এবং ফিবরোমাকে ক্রায়োসার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
৪.মস্তিস্কের টিউমার,চোখের ছানি,প্রসূতি সমস্যায় এ পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়।

 

ক্রায়োসার্জারি(Cryosurgery) চিকিৎসা পদ্ধতি :

ক্রায়োসার্জারি(Cryosurgery) চিকিৎসায় প্রথমেই সিমুলেটেড সফটওয়্যার দ্বারা অক্রান্ত কোষগুলোর (যেমন-আঁচিল,ছোট টিউমার) অবস্থান ও সীমানা নির্ধারন করা হয়। এরপর ক্রায়োপ্রোবের সুচের প্রান্ত দিয়ে আক্রান্ত টিস্যু বা টিউমারের কোষকে বরফ শীতল তাপমাত্রায় জমাটবদ্ধ করার জন্য তরল নাইট্রোজেন, আর্গন বা অন্যান্য ক্রায়োজনিক এজেন্ট পৃথক পৃথকভাবে ঐ স্থলে প্রবেশ করানো হয়। এগুলোর কোনো কোনটি 41০C তাপমাত্রার উদ্ভব ঘটায়; যার ফলে আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুর পানি জমাটবদ্ধ হয়ে সেটিকে একটি বরফ খন্ডে পরিণত করে।

এ সময় আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে উক্ত কোষ বা টিস্যুটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অতঃপর পুনরায় ঐ স্থানে ক্রায়োপ্রোবের সাহায্যে হিলিয়াম গ্যাস প্রবেশ করিয়ে এই তাপমাত্রাকে 20০C থেকে 30০C পর্যন্ত ওঠানো হয়। এতে আক্রান্ত কোষ বা টিস্যুটির বরফ গলে গিয়ে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত স্থানে সুনির্দিষ্ট কােষ বা টিস্যুকে নিখুঁতভাবে চিহ্নিত করার জন্য আল্ট্রা সাউন্ড বা এমআারআই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ফলে এর আশেপাশে থাকা সুস্থ কোষগুলোর কোনো ক্ষতি হয় না।

 

ক্রায়োসার্জারিতে আইসিটির ব্যবহার:

১. ক্রায়োসার্জারিতে সু্ইঁয়ের মতো লম্বা ক্রায়োপ্রোব যন্ত্রের সাহায্যে আক্রান্ত টিউমারে নাইট্রোজেন ও আর্গন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ক্রায়োপ্রোব সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য এবং পাশের সুস্থ কোষ যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত আল্ট্রাসাউন্ড অথবা এমআরআই (MRI-Magnetic Resonance Imaging) ব্যবহার করা হয়।
২. ব্রায়মিল হলো পৃথিবীর মধ্যে নাম্বার ওয়ান হ্যান্ডহ্যাল্ড লিকুইড নাইট্রোজেন ক্রায়োসার্জিক্যাল এবং ক্রায়োস্প্রে ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের পণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থায় কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে।
৩. ক্রায়োসার্জারির জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার তৈরিতে ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটির প্রয়োগ করা হয় যা তথ্য প্রযুক্তির অবদান।

 

ক্রায়োসার্জারির সুবিধা:

১. ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রচলিত শল্য চিকিৎসার মতো অতটা কাটাছেঁড়া করার প্রয়োজন হয় না।
২. এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
৩. ক্যান্সারের চিকিৎসায় অন্য সব পদ্ধতির চেয়ে ক্রাইয়োসার্জারি অনেক বেশি সুবিধাজনক। প্রকৃত সার্জারির চেয়ে এটি কম আক্রমণকারী; চামড়ার ভেতর দিয়ে ক্রায়োপ্রোব ঢুকানোর জন্য অতি ক্ষুদ্র ছেদনের প্রয়োজন পড়ে।
৪. সার্জারির ক্ষেত্রে ব্যথা, রক্তপাত এবং অন্যান্য জটিলতাসমূহকে ক্রায়োসার্জারিতে একেবারেই কমিয়ে আনা হয়।
৫. অন্যান্য চিকিৎসার চেয়ে এটি কম ব্যয়বহুল এবং সুস্থ হতেও খুব কম সময় নেয়।
৬. হাসপাতালে খুবই স্বল্প সময় অবস্থান করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালে থাকতেই হয় না।
৭. অনেক সময় লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমেই ক্রায়োসার্জারি সম্পন্ন করা যায়।
৮. চিকিৎসকগণ শরীরের সীমিত এলাকায় ক্রায়োসার্জিক্যাল চিকিৎসা দেন, ফলে তারা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যবান কোষকলাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন।
৯. এ চিকিৎসাটি নিরাপদে বার বার করা যায় এবং সার্জারি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসার পাশাপাশি করা সম্ভব।
১০. যেসব রোগীরা তাদের বয়স এবং অন্যান্য শারীরিক কারণে স্বাভাবিক সার্জারির ধকল নিতে অক্ষম তাদের জন্য ক্রায়োসার্জারি হলো আদর্শ।

 

ক্রায়োসার্জারির অসুবিধা:

১. ক্রায়োসার্জারির প্রধানতম অসুবিধা হলো এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতার অনিশ্চয়তা।
২. ইমেজিং পীক্ষাসমূহের মাধ্যমে চিকিৎসকগণ টিউমারসমূহ দেখে নিয়ে তার ক্ষেত্রে ক্রায়োসার্জারিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারলেও এটি আণুবীক্ষণিক ক্যান্সার ছড়ানোকে প্রতিহত করতে পারে না।
৩.যকৃত, পিত্ত ও প্রধান রক্তনালীতে রক্তক্ষরণ ঘটায়
৪. ত্বকের ক্যান্সারের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারির ফলে ত্বক ফুলে যায় এবং স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৫.রোগ ছড়িয়ে পড়েনি এমন ক্যান্সার চিকিৎসায় এ পদ্ধকি কার্যকর, অন্যথায় তেমন কার্যকর নয়।

 

ক্রায়োসার্জারি কাদের জন্য উপযোগী নয়:

১.যাদের ঠান্ডায় সংবেদনশীলতা বেশি।
২.যাদের ক্ষত দেরিতে শুকায় বা ডায়াবেটিক আছে।

 

রোবট ও রোবটিক্স সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন


 

Written by:

Habibur Rahman(Habib Sir)
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532, +8801913865284

1 Comment.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *