প্রথম অধ্যায় লেকচার-১৮: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)

Genetic Engineering

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)

কোন জীব কোষ থেকে একটি নির্দিষ্ট জিন বহনকারী DNA খন্ড পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবে স্থানান্তরের কৌশলকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং(Genetic Engineering) বলা হয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-কে জেনেটিক মডিফিকেশন (genetic modification/manipulation-GM) ও বলা হয়।

আর যে পদ্ধতিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কার্য সম্পন্ন করা হয় তাকে রিকম্বিনেট DNA টেকনোলজি বা জিন ক্লোনিং বলে।

১৯৭১ মতান্তরে ১৯৭২ সালে বিজ্ঞানী Paul Berg বানরের ভাইরাস SV40 ও lambda virus এর DNA এর সংযোগ ঘটিয়ে বিশ্বের প্রথম রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ অণু তৈরি করেন। এই জন্য Paul Berg কে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর জনক বলা হয়।

১৯৭৩ সালে E.coli ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিডের মধ্যে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট জিন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে হারবার্ট বয়ার(Herbert Boyer) এবং স্টেনলে কোহেন (Stanley Cohen) সর্বপ্রথম ট্রান্সজেনিক জীব তৈরি করেন। এর এক বছর পর রুডলফ (Rudolf Jaenisch) জেনিস জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে একটি ট্রান্সজেনিক ইঁদুর তৈরি করেন, যা বিশ্বের প্রথম ট্রান্সজেনিক প্রাণী।

 

রিকমবিনেন্ট DNA প্রযুক্তির ধাপসমূহঃ

১। DNA নির্বাচন
২। DNA এর বাহক নির্বাচন
৩। DNA খণ্ড কর্তন
৪। খণ্ডনকৃত DNA প্রতিস্থাপন
৫। পোষকদেহে রিকম্বিনেন্ট DNA স্থানান্তর
৬। রিকম্বিনেন্ট DNA এর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মূল্যায়ন।

 

কৃষিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায়োগিক গুরুত্বসমূহঃ

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মূল গবেষণা কৃষিকে ঘিরে। এর সাহায্যে Genetically modified crops উৎপন্ন করা হয় যা উচ্চফলনশীল, উন্নত জাতের, প্রকৃতি সহনশীল, রোগজীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। কৃষিতে Genetically modified crops উৎপাদনে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিটি কৃষি সম্পদ উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখতে পারে সেগুলো হলো-

১. পরিবেশের বিভিন্ন হুমকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে যেমন, অতিরিক্ত শীত সহ্য করা, পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া, ভাইরাস ও ফাংগাল দ্বারা আক্রান্ত না হওয়া ইত্যাদি সক্ষমতাসম্পন্ন উন্নত বীজ উৎপাদনসহ মাটির লবণাক্ততা সহ্য করার মধ্যে দিয়ে উন্নত ফসল নিশ্চিত করা।
২. ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করার মাধ্যমে উন্নত কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৩. শস্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করা ও অধিক ফলনশীল শস্য উৎপাদন করা। যেমন:Amflora Tomato
৪.খরা বৃষ্টিসহনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন স্বল্প সেচের প্রয়োজন হয় এমন শস্যের জাত উদ্ভাবন করা। উপর্যুক্ত সবগুলো কার্যক্রমেই উন্নত কৃষি সম্পদকে নিশ্চিত করে বিধায় কৃষি সম্পদ উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

 

প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রায়োগিক গুরুত্বসমূহ-

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering) ব্যবহার করে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে এর প্রায়োগিক গুরুত্বসমূহ হলো-
১.জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে উন্নত প্রজাতির গরু উৎপাদন কিংবা সাধারণ গরুকে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে জেনেটিক্যাল মডিফাই করে অধিক মোটাতাজা করে তোলা যায়। এ ধরনের গরুগুলো অধিক মাংসের চাহিদা মেটাাের পাশাপাশি অধিক দুধ প্রদানেও সক্ষম হয়ে থাকে।
২.অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের জেনেটিক বিজ্ঞানীগণ মহিষের জীনতত্ত¡ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এর জীবনরহস্য উদঘাটনে সফল হয়েছেন। এর ফলে এখন উন্নত প্রজাতির মহিষ উৎপাদন সম্ভব যা আমাদের কৃষিকাজে ব্যাপক সহায়ক হতে পারে। আমাদের দুগ্ধের চাহিদা মেটাতেও এধরনের মহিষ কার্যকর হতে পারে।

 

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ:

১.জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গবেষণার তথ্য ও ফলাফল গবেষকদের মধ্যে আদান-প্রদান ও মতবিনিময়ের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়।
২.বিভিন্ন প্রাণীর জিনের তথ্য এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল সংরক্ষণ করার জন্য ডেটাবেজ ব্যবহৃত হয়।
৩.এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধাপে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিশেষ জটিল সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।
৪.জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রক্রিয়ায় গবেষণার জন্য কম্পিউটার সিম্যুলেশন ব্যবহৃত হতে পারে।

 

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবহার বা সুফল

বর্তমান বিশ্বে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদন, শিল্প উৎপাদন, পরিবেশ রক্ষাসহ মানবজীবনের নানা চাহিদা মেটাতে কাজ করছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি। মেডিকেল সায়েন্স, ফার্মাসিউটিক্যাল্ ও কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রির জীবন রক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদন, এনজাইম ও হরমোন উৎপাদনে এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কৃষিতে উন্নত ফলনের জন্য জেনেটিক প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিচে সংক্ষেপে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ব্যবহার আলোচনা করা হলো-

ইনসুলিন তৈরি: মানবদেহের ইনসুলিন তৈরির জিনকে ব্যাকটেরিয়া কোষে প্রবিষ্ট করে বাণিজ্যিকভাবে ইনসুলিন উৎপাদন হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সবচেয়ে বড় সুফল। ইনসুলিন ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজন হয়।

উন্নতমানের ফসল উৎপাদন: ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- সয়াবিন, ভুট্টা, তুলা, তৈলবীজ, টমেটো, পেঁপে ইত্যাদির জিন বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি, পোকা-মাকড় ও অন্যান্য উদ্ভিদনাশক ছত্রাক ও ভাইরাস প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। জেনেটিক্যাল রূপান্তির ফসল অধিক খরা ও ঠান্ডা সহ্য করতে পারে।

রোগের চিকিৎসা: জিন থেরাপি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং(Genetic Engineering) এর একটি সুফল। জিন থেরাপির মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা এবং ত্রুটিপূর্ণভাবে জিন পরিবর্তন করে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়।

ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন: নির্দিষ্ট জিনের ক্লোনিং দ্বারা নতুন অনেক Sophisticated ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন করা হয়।

হরমোন তৈরি: শিল্পজাত ব্যাকটেরিয়া থেকে উৎপাদিত হিউম্যান গ্রোথ হরমোন বামনত্ব (বেঁটে) রোধ কর এবং পোড়া ত্বক, ফেটে যাওয়া হাড় ও খাদ্যনালীর আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

ভাইরাসনাশক: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে তৈরি Interferon (মানব কোষ থেকে নিঃসৃত এক ধরনের রস) ভাইরাসনাশক (Anti viral) হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

টিকা ও জ্বালানি তৈরি: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফলে জৈব কারখানায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও এনজাইম উৎপাদন করা যায়। এগুলো দিয়ে প্রচুর সংখ্যায় Tryptophan-এর মতো টিকা ও সম্পূরক তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া জ্বালানি তৈরিতেও এগুলো ব্যবহৃত হয়।

মৎস্য উন্নয়ন: স্যামন মাছের জিন স্থানান্তরের মাধ্যমে মাগুর, কার্প, তেলাপিয়া মাছের আকৃতি অনেক বড় করা সম্ভব হয়েছে।

পরিবেশ সুরক্ষা: বিজ্ঞানীরা জিন প্রকৌশলের উপর গবেষণা করে নতুন ব্যাকটেরিয়া তৈরি করেছেন, যা পরিবেশ সুরক্ষায় অবদান রাখছে।

জেনেটিক ত্রুটিসমূহ নির্ণয়: গর্ভবতী মহিলাদের Fetuses দেখে সন্তানের জেনেটিক ত্রুটিসমূহ নির্ণয় করা যায়। পিতা-মাতা ও ডাক্তার মিলে শিশুর জন্মের পূর্বেই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।

ফরেনসিক টেস্টের ক্ষেত্রে:সেরোলজি পদ্ধতিতে রক্ত, বীর্য রস, মূত্র, অশ্রু, লালা ইত্যাদির DNA অথবা অ্যান্টিবডি থেকে ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে অপরাধীকে সনাক্ত করা হয়।

 

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ঝুঁকিসমূহ:

প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে উৎপাদিত এগঙ পণ্যসমূহ বিষক্রিয়া মুক্ত হতে হবে। এতে কোনো প্রকার এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। এর কোয়ালিটি মানুষের খাদ্য উপযোগী না পশুখাদ্য উপযোগী তা নির্দিষ্ট করতে হবে।

পরিবেশ ঝুঁকি: যদিও পরিবেশের উপর GMO এর প্রভাব নির্ধারণ কঠিন তদুপার এক্ষেত্রে কতিপয় বিষয়ের ঝুঁকি যথাসম্ভব নির্ধারণ করা আবশ্যক। যেমন GMO এর মাঝে প্রবেশকৃত জিন বা ঐ জিনের প্রোডাক্ট (প্রোটিন) পরিবেশে উন্মুক্ত অবস্থায় কতদিন অবস্থান করতে পারে, GMO ব্যতীত অন্যান্য জীব ঐ ট্রান্সজেনিকের প্রতি কতটা সংবেদনশীল, অপ্রত্যাশিত জিনের প্রকাশ বা ট্রান্সজিনের স্থায়িত্বের অভাব ঘটছে কিনা এ বিষয়গুলো নির্ধারণ করা জরুরি। এছাড়াও ট্রান্সজিনের প্রকাশের ফলে বাস্তসংস্থানের প্রভাব, মাটির উর্বরতার উপর প্রভাব, জৈবযৌগ ও জৈবৈচিত্রের পরিবর্তনের প্রভাব প্রভৃতি ঝুঁকিগুলোও এক্ষেত্রে বিবেচনায় নিতে হবে।

চাষ ঝুঁকি: এই বিভাগে যে সমস্ত বিষয় খেয়াল রাখতে হয় তা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ কাক্সিক্ষত জীবের টিকে থাকার সামর্থ্য, পরিবর্তনশীল চাষ খরচ (আগাছা বা পোকা-মাকড় দমনের ক্ষেত্রে), পুষ্টিমানের পরিবর্তন, আগাছার প্রতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। এই বিভাগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আগাছা বা উৎকৃষ্ট আগাছা সৃষ্টি করার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা। কারণ কোনো এগ শস্য যদি কোনো Super Weed সৃষ্টি করে তবে অন্য ফসলের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

 

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষতিকর দিকগুলোঃ 

১. রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ  যদি কোন কারণে ক্ষতিকর হয়ে পড়ে তাহলে এর প্রভাবে জীব জগতে বিপর্যয় নেমে আসবে।
২. নিবেশিত জিন যদি ক্ষতিকর প্রোটিন সংশ্লেষণ করে তাহলে ক্যান্সার সহ নতুন রোগ হতে পারে।
৩. যদি কোষে প্রবিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট জিন কোন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ায় স্থানান্তরিত হয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে ঐ রোগজীবাণু দমন করা সম্ভব হবে না।

 

প্রথম অধ্যায় লেকচার-১৭: বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics)


 

Written by:

Habibur Rahman(Habib Sir)
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532, +8801913865284

7 Comments.

  1. Thanks for your marvelous posting! I quite enjoyed reading it, you’re a great author.I will
    be sure to bookmark your blog and may come back from now on. I want to encourage
    one to continue your great writing, have a nice evening!

  2. I’ve been surfing online more than 2 hours today, yet I never found any
    interesting article like yours. It’s pretty worth enough for me.

    In my opinion, if all site owners and bloggers made good content
    as you did, the web will be a lot more useful than ever before.

  3. I’m not sure where you’re getting your information, but good topic.
    I needs to spend some time learning much more or understanding more.

    Thanks for excellent information I was looking for this
    information for my mission.

  4. Your style is very unique in comparison to other people I have read stuff from.
    I appreciate you for posting when you’ve got the opportunity,
    Guess I will just bookmark this site.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *