বিশ্বগ্রাম(Global Village):
বৈশ্বিক যোগাযোগের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ স্থানকে বিশ্বগ্রাম বলে।
অথবা,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর যে পরিবেশে পৃথীবির সকল মানুষ দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করেও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি একক সমাজে বসবাস করার সুবিধা পায় এবং একে অপরকে সেবা প্রদান করতে পারে তাকে বিশ্বগ্রাম বা Global Village বলে।
কানাডিয়ান দার্শনিক ও লেখক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান সর্বপ্রথম গ্লোবাল ভিলেজ শব্দটিকে সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি ১৯৬২ সালে ‘The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man’ এবং ১৯৬৪ সালে ‘Understanding Media: The Extensions of Man’ বইয়ের মাধ্যমে এ বিষয়টি সকলের সামনে প্রকাশ করেন। এই জন্য মার্শাল ম্যাকলুহানকে বিশ্বগ্রামের জনক বলা হয়।
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ
বিশ্বগ্রামের প্রধান উপদানসমূহ হলো-
১. হার্ডওয়্যার (Hardware)
২. সফ্টওয়্যার (Software)
৩. ইন্টারনেট সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি
৪. ডেটা (Data)
৫. মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা (Capacity)
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১. হার্ডওয়্যার (Hardware) : বিশ্বগ্রামে যে কোনো ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের জন্য সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন তা হলো উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রী। হার্ডওয়্যার বলতে এখানে বুঝায় কম্পিউটার আর এর সাথে যন্ত্রপাতি, Mobile Phone, অডিও-ভিডিও রেকর্ডার, স্যাটেলাইট, রেডিও, টেলিভিশন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত ডিভাইসসমূহ।
২. সফ্টওয়্যার (Software) : বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সফ্টওয়্যারের গুরুত্ব অপরিসীম। সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজিং সফ্টওয়্যার, কমিউনিকেটিং সফ্টওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং ভাষা।
৩. ইন্টারনেট সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি : বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড হলো নিরাপদভাবে রিসোর্স শেয়ার করার ইন্টারনেট সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন উপাত্ত ও তথ্য ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে। নিরাপদ তথ্য আদান-প্রদানই হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূলভিত্তি। এক্ষেত্রে টেলিকমিউনিকেশন, ব্রডকাস্টিং এবং Internet ব্যবহার করে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
৪. ডেটা বা ইনফরমেশন: ডেটা হচ্ছে Fact বা item যা এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। বিশ্বগ্রামে বিভিন্ন তথ্য যা ডেটা থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করে পাওয়া যায়। বিশ্বগ্রামে ডেটা ও তথ্যকে মানুষ তার প্রয়োজন একে অপরের সাথে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময়ে শেয়ার করতে পারে।
৫. মানুষের জ্ঞান বা সক্ষমতা: বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলোর মধ্যে ব্যবহারকারীর জ্ঞান বা সক্ষমতা অন্যতম। বিশ্বগ্রাম মূলত তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। তাই মানুষের সচেতনতা ও সক্ষমতার ওপর এর সুফল নির্ভর করছে।
গ্লোবাল ভিলেজের সুবিধাসমূহ (Advantages of Global Village)
- মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোনো স্থানের যে কোনো ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা যায়।
- Global Village বা বিশ্বগ্রামের ফলে পৃথীবির মানুষের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব কমে আসে।
- ব্যবস্থাপনা খরচ কমে।
- অন-লাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বই পড়া যায় এবং ঘরে বসেই খুব সহজে বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা গ্রহণ করে বিদেশি ডিগ্রি লাভ করা যায়।
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান লাভ করা যায়।
- টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পৃথিবীর যেকোনো ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থান করে বিশ্বের নামি-দামি চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।
- ইন্টারনেট টিভি (IP TV) ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই বিভিন্ন বিনোদন উপভোগ করা যায়।
- ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে উপার্জন করা যায়। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।
গ্লোবাল ভিলেজের অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Global Village)
- ইন্টারনেট হ্যাকিং করে তথ্য চুরি হয় এবং তথ্যের গোপনীয়তা প্রকাশ পায়।
- অসত্য তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে সমাজে বিভিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
- অনেক সময় জনগণ কোনো কিছু পড়ে এর সত্যতা যাচাই-বাচাই না করেই সত্য বলে গ্রহণ করে।
- অনলাইন বা ইন্টারনেটে অনেক সময় ব্যয়ের কারণে সত্যিকারের বন্ধুর চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে যায় ফলে মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি দেখা দেয়।
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি হতে পারে।
- পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হওয়া।
- সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হওয়া।
- সহজে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ফলে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যায়।
- প্রযুক্তির বেশি ব্যবহারের ফলে মানুষের শারীরিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- ইন্টারনেট প্রযুক্তির ফলে অনেক কাজ সহজ হওয়ায় বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়া।
বিশ্বগ্রামের ধারণা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানসমূহ:
বিশ্বগ্রাম ধারণার সাথে অনেক উপাদান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রধান প্রধান উপাদনগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. যোগাযোগ(Communication)
২. কর্মসংস্থান(Employment)
৩. শিক্ষা(Education)
৪. চিকিৎসা সেবা(Treatment)
৫. গবেষণা(Research)
৬. অফিস(Office)
৭. বাসস্থান(Residence)
৮. ব্যবসায়-বাণিজ্য (Business)
৯. সংবাদ(News)
১০. বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ(Entertainment and Social Communication)
১১. সাংস্কৃতিক বিনিময়(Cultural Exchange)
লেকচার-১: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ধারণা দেখতে এখানে ক্লিক করুন
Written by,
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532 OR +8801913865284