দ্বিতীয় অধ্যায় লেকচার-০৯: মোবাইল কমিউনিকেশন(Mobile Communication)

Mobile Communication

মোবাইল কমিউনিকেশন(Mobile Communication)

মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমাণ বা স্থানান্তরযোগ্য। সেলুলার ফোন বা হ্যান্ড ফোনকে ‘মোবাইল ফোন ‘ নামকরন করা হয়েছে কারন এটাকে সহজে যে কোন স্থানে বহন করা যায়। এটি ষড়ভূজ আকৃতির ক্ষেত্র বা এক একটি সেল নিয়ে কাজ করে বলে এটি ‘সেলফোন’ নামেও পরিচিত। একাধিক চলনশীল ডিভাইস বা একটি চলনশীল এবং অন্যটি স্থির ডিভাইসের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত কমিউনিকেশন সিস্টেমকে মোবাইল কমিউনিকেশন বলে।

Mobile Communication

মোবাইল ফোন রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে। শুধু কথা বলাই নয়, আধুনকি মোবাইল ফোন দিয়ে আরও অনেক সেবা গ্রহণ করা যায়। এর উদাহরণ হচ্ছে এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সার্ভিস, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সার্ভিস, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ইনফ্রারেড, ব্লুটুথ, ক্যামেরা, গেমিং, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইত্যাদি।

মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ড.মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস নিচেল কে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। ড.মার্টিন কুপারকে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়। প্রতিটি মোবাইল ফোনে একটি ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপ ব্যবহার করা হয় যাকে SIM Card বলে।

মোবাইল ফোনের সুবিধা:
১.যে কোন মোবাইল ফোন ব্যবহারীর কাছে এসএমএস প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
২.ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়।
৩.জিপিএস সুবিধা উপভোগ করা যায়।
৪.অডিও গান শোনা ও ভিডিও দেখা এবং অডিও ভিডিও রেকর্ড করা যায়।
৫.ই-মেইল আদান-প্রদান করা যায়।
৬.ভিডিও কল, ভয়েস ও ভিডিও চ্যাটিং করা যায়।
৭.এমএমএস আদান-প্রদান করা যায়।
৮.একজন ব্যক্তি দেশ-বিদেশের যে কোন স্থানে যে কোন ব্যক্তির সাথে সহজেই কথা বলতে পারে।

মোবাইল ফোন প্রযুক্তির প্রকারভেদ:
বর্তমানে প্রচলিত মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১.GSM প্রযুক্তি।
২.CDMA প্রযুক্তি।

GSM প্রযুক্তি: GSM এর পূর্ণরুপ হলো Global System for Mobile Communication । GSM বিশ্বব্যাপি সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল টেলিফোন সিস্টেম। একে ২য় প্রজন্মের মোবাইল ফোন সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

GSM এর বৈশিষ্ট্য/সুবিধা:
১. আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা প্রদান করে।
২. সর্বোচ্চ দূরত্ব হলো ৩৫ কি.মি.।
৩.সিম সহজলভ্য হওয়ায় যে কোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহারযোগ্য।
৪.ফ্রিকুয়েন্সি খুব ভালো।
৫.সিগন্যাল ক্ষয় ও দূর্বলতা অনেক কম।

CDMA প্রযুক্তি: CDMA এর পূর্ণরুপ হলো Code Division Multiple Access । এটি GSM প্রযুক্তির চেয়ে নতুন প্রযুক্তি। CDMA যে পদ্ধতিতে ডেটা আদান-প্রদান করে তাকে স্প্রেড স্পেকট্রাম বলে। CDMA প্রযুক্তিতে ভয়েস ও ডেটা অ্যাপ্লিকেশনে অনেক বেশি ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়।

CDMA প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা:
১.কভারেজ এরিয়া ১১০ কি.মি পর্যন্ত।
২.নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক বেশি।
৩.নয়েজ প্রায় নেই বললেই চলে।
৪.প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য আলাদা কোড দেওয়া হয়।
৫.ডেটা ট্রান্সফার রেট 154kbps-614 kbps।

CDMA প্রযুক্তির অসুবিধা:
১.আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা নেই।
২.যে কোন ধরনের মোবাইল সেটে ব্যবহার করা যায় না।
৩.এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার তুলনামূলক কম।

 

GSM ও CDMA প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য

GSM CDMA
   ১.GSM এর পূর্ণরুপ হলো Global System for           Mobile  Communication    ১.CDMA এর পূর্ণরুপ হলো Code Division           Multiple Access
  ২.যে কোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যায়।   ২.যে কোন হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যায় না।
  ৩.হ্যান্ড অফ পদ্ধতি জটিল   ৩.হ্যান্ড অফ পদ্ধতি জটিল
  ৪.GPRS ও EDGE এর সুবিধা রয়েছে   ৪.GPRS ও EDGE এর সুবিধা নেই
  ৫.আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা আছে।   ৫.আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা নেই।
  ৬.ডেটা ট্রান্সফার রেট 56kbps।   ৬.ডেটা ট্রান্সফার রেট 154kbps-614 kbps।
  ৭.কভারেজ এরিয়া ৩৫ কি.মি পর্যন্ত।   ৭.কভারেজ এরিয়া ১১০ কি.মি পর্যন্ত।

Handoff(হ্যান্ড অফ):মোবাইল যোগাযোগকালীন অবস্থায় প্রাপক বা প্রেরক এক বেজ স্টেশন থেকে অন্য বেজ স্টেশনে গমন করার সময় সাময়িকভাবে কল বিচ্ছিন্ন থাকে, এই ঘটনাকে Handoff বলে।

 

বিভিন্ন প্রজন্মের মোবাইল:
মোবাইল ফোনের উন্নয়ন ও বিকাশ লাভের জন্য অনেকগুলো ধাপ বা পর্যায় অতিক্রম করতে হয়েছে। ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সামরিক বাহিনী প্রথম মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু করে। ঐ সময়ে মোবাইল ফোনের ধারণক্ষমতা ছিলো কম, নেটওয়ার্ক সিস্টেম ছিলো দূর্বল। মোবাইল ফোনের প্রজন্মকে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১.প্রথম প্রজন্ম (1st Generation-1G, 1979-1990)
২.দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation-2G, 1991-2000)
৩.তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation-3G, 2001-2008)
৪.চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation-4G, 2009-2019)
৫.পঞ্চম প্রজন্ম (5th Generation-5G, 2020-….)

প্রথম প্রজন্ম (1st Generation-1G, 1979-1990)

১৯৭৯ সালে জাপানের এনটিটি প্রথম বানিজ্যিকভাবে অটোমেটেড সেলুুলার নেটওয়ার্ক চালু করার মাধ্যমে 1G এর সূচনা করে। উদাহরণ:AMPS(Advanced Mobile Phone System)।

প্রথম প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য:
১.কথোপকোথন অবস্থায় অবস্থানের পরিবর্তন হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।
২.আকার বড় ও ওজন বেশি ছিলো।
৩.সেলুলার নেটওয়ার্কের প্রবর্তন।
৪.এনালগ পদ্ধতিতে রেডিও সিগন্যালের ব্যবহার ছিলো।
৫.বেজ স্টেশন ও মোবাইল ফোন দুটি ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহৃত হতো।
৬.অর্ধ-পরিবাহী মেমোরি ও মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার হতো।
৭.চ্যানেল একসেস পদ্ধতি হলো FDMA(Frequency Division Multiple Access)

 

দ্বিতীয় প্রজন্ম (2nd Generation-2G, 1991-2000)

১৯৯০ সালে GSM স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে 2G মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয়। উদাহরণ: Digital AMPS, GSM 850/900/1800/1900.

দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য:
১.নয়েজ মুক্তভাবে ডিজিটাল ট্রান্সমিশন সিস্টেম চালু হয়।
২.প্রিপেইড পদ্ধতি সেবা চালু হয়।
৩.ভয়েস ও ডেটা প্রেরণের সুবিধা চালু হয়।
৪.এসএমএস, এমএমএস ও টেক্সট মেসেজিং সেবা চালু হয়।
৫.চ্যানেল একসেস পদ্ধতি হলো FDMA,TDMA,CDMA
[FDMA-Frequency Division Multiple Access
TDMA-Time Division Multiple Access
CDMA-Code Division Multiple Access]
৬.সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা ও ইন্টারনেট ব্যবহার সুবিধা।
৭.ডেটার নিরাপত্তার জন্য এনক্রিপশন ব্যবস্থা।
৮.ডেটা আদান-প্রদানে ত্রুটি নির্নয় ও ত্রুটি সংশোধন হতে থাকে।

 

তৃতীয় প্রজন্ম (3rd Generation-3G, 2001-2008)

২০০১ সালে জাপানে এনটিটি (DOCoMo)ডোকোমো WCDMA(Wide band Code Division Multiple Access) প্রযুক্তি ব্যবহার করে 3G মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু করে। WCDMA পরবর্তীতে UMTS(Universal Mobile Telecommunication) নামে পরিচিতি লাভ করে।

তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য:
১.উচ্চগতির ডেটা স্থানান্তর(2Mbps+) এবং আন্তর্জাতিক রোমিং সুবিধা।
২.ভিডিও কলের প্রচলন শুরু।
৩.ব্যান্ডউইথ, নিরাপত্তা ও বিশ্বস্ততা বেশি।
৪.সার্কিট সুইচিংয়ের পরিবর্তে প্যাকেট সুইচিং প্রবর্তন।
৫.EDGE পদ্ধতি কার্যকর হয়। ফলে অধিক পরিমান ডেটা স্থানান্তর হয়।
৬.মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স ইত্যাদি সেবা কার্যক্রম চালু হয়।
৭.মডেম সংযোজনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার।

 

চতুর্থ প্রজন্ম (4th Generation-4G, 2009-2019)

২০০৯ সালে এ প্রজন্মের মোবাইল ব্যবহার শুরু হয়। এখানে 4G বলতে LTE কে বোঝায়, LTE(Long Term Evolution) মূলত IP বেজড নেটওয়ার্ক। এর গতি তয় প্রজন্মের চেয়ে ৫০ গুন বেশি। ফলে মোবাইল ফোন সিস্টেমে আলট্রা-ব্রডব্যান্ড গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য:
১.ডেটা ট্রান্সফার রেট বেশি ।
২.4G এর গতি 3G এর চেয়ে ৫০ গুন বেশি।
৩.এ প্রজন্মের সার্কিট/প্যাকেট সুইচিং এর পরিবর্তে ইন্টারনেট প্রোটোকল(IP) নির্ভর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়।
৪.আলট্রা-ব্রডব্যান্ড গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
৫.উন্নতমানের মোবাইল টেলিভিশন দেখার উপযোগী।
৬.এ প্রজন্মের মোবাইল ফোন LTE স্ট্যান্ডার্ড।
৭.উচ্চগতির ফ্রিকুয়েন্সি এবং ত্রিমাত্রিক ছবি প্রদর্শনের ব্যবস্থা।

 

পঞ্চম প্রজন্ম (5th Generation-5G, 2020-….)

পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সিস্টেম মোবাইল ফোনের মধ্যে অত্যাধুনিক ও সর্বশেষ সংস্করণ। এ প্রজন্মের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক WWWW নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে 4K

পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য:
১.এর মাধ্যমে 4K ভিডিও ও টিভি দেখা যায়।
২.এতে দ্রুত ওয়েবসাইট, অ্যাপ, ভিডিও বার্তা লোড ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
৩.এর গতি 4G এর তুলনায় চার গুন বেশি।
৪.5G ফোনে 100Mbps পর্যন্ত গতি পওয়া যাবে।
৫.এর ওজন এবং উচ্চতা সকল প্রজন্মের মোবাইল ফোনের চেয়ে কম।

 

 

দ্বিতীয় অধ্যায় লেকচার-০৮:ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন সিস্টেম (Bluetooth, Wi-Fi, Wi-MAX)



Written by:

Habibur Rahman(Habib Sir)
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *