প্রথম অধ্যায় লেকচার-১৯: ন্যানোটেকনোলজি(Nanotechnology) এবং এর প্রয়োগক্ষেত্রসমূহ।

Nanotechnology

ন্যানোটেকনোলজি(Nanotechnology)

ন্যানো (Nano) শব্দটি গ্রিক Nanos শব্দ থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ Dwarf (বামন বা জাদুকারী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী), কিন্তু এটি পরিমাপের একক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিভাষায় পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে ন্যানো টেকনোলজি (Nanotechnology) বলে।

অন্যভাবে বলতে পারি,ন্যানোমিটার স্কেলে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্পর্কিত টেকনোলজিকেই ন্যানোটেকনোলজি বলে। এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ তথা ১০-৯ মিটারকে এক ন্যানোমিটার বলে। অর্থাৎ 1 nm = 10-9 m
আমরা তাহলে বলতে পারি ন্যানোমিটার (1 থেকে 100 ন্যানোমিটার) স্কেলে যে সকল টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোই হলো ন্যানো টেকনোলজি।

 

১৯৫৯ সালে আমেরিকান বিখ্যাত পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) তার “There’s Plenty of Room at the Bottom ” আলোচনায় প্রথম ন্যানো টেকনোলজির ধারণা বর্ননা করেছিলেন। যেখানে তিনি পরমাণুর প্রত্যক্ষ ম্যানিপুলেশনের দ্বারা সংশ্লেষণের সম্ভাবনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। আর এই জন্যই রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।

 

ন্যানো টেকনোলজিতে দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার একটি হলো “bottom-up” বা নিচ থেকে উপরে এবং অপরটি “top-down” বা উপর থেকে নিচে।

  1. “bottom-up” পদ্ধতিতে, বিভিন্ন উপকরণ এবং ডিভাইসগুলো আণবিক উপাদানগুলো থেকে তৈরি করা হয় যা আণবিক নীতির দ্বারা রাসায়নিকভাবে নিজেদেরকে একত্রিত করে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র আকারের জিনিস দিয়ে বড় আকারের জিনিস তৈরি করা হয়।
  2. “top-down” পদ্ধতিতে ন্যানো-অবজেক্টগুলি পারমাণবিক স্তরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বৃহত্তর বস্তু থেকে নির্মিত হয়। টপ-টু-ডাউন পদ্ধতিতে কোন জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেয়া হয়।
  3. আমাদের বর্তমান ইলেক্ট্রনিক্স হল, “top-down” প্রযুক্তি। আর ন্যানোটেকনোলজির হল “bottom-up” প্রযুক্তি।

 

ন্যানো প্রযু্িক্তর প্রয়োগক্ষেত্র (Application fields of Nano Technology)

বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরিতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। নিম্নে কতিপয় প্রয়োগক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো:

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরিতে:কম্পিউটারের মেমোরি, গতি, দক্ষতা ইত্যাদি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন হার্ডওয়্যার এবং ভিডিও গেমস কনসোল তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।

ন্যানো রোবট তৈরিতে: ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরির গবেষণা চলছে। এ ধরনের রোবট মানবদেহের অভ্যন্তওে অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হবে।

ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে: বিদ্যুৎ খরচ, ওজন এবং আকৃতি কমিয়ে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।

জ্বালানি তৈরিতে: কম খরচে নিম্নমানের কাঁচামালের মাধ্যমে জ্বালানি তৈরি এবং বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারি ও হাইড্রোজেন আয়নের জন্য ফুয়েল সেল তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।

প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরিতে: খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং -এর কাজে এবং বিভিন্ন জিনিসের প্রলেপ তৈরির কাজে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।

ঔষধ তৈরিতে: ঔষধ তৈরির আণবিক গঠনে, যাতে রোগাক্রান্ত সেলে সরাসরি ঔষধ প্রয়োগ করা যায়। ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরিকৃত ঔষধকে স্মার্ট ড্রাগ বলা হয়।

বস্ত্র শিল্প তৈরিতে: বস্ত্র শিল্পে কাপড়ের ওজন ও ঘনত্ব উন্নতিকল্পে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।

ক্যান্সার নির্ণয় ও নিরাময়ে: ন্যানোসেন্সর ব্যবহার করে মানবদেহের রক্তের ভেতরে সৃষ্টিকারী উপাদান বায়োমার্কার সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। ন্যান্যো সুচ ব্যবহার করে সূ²ভাবে শুধুমাত্র ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে ঔষধ প্রয়োগ করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায়।

খেলাধুলার সামগ্রী তৈরিতে: টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য, বাতাসে গলফ বলের পজিশন ঠিক রাখার জন্য, র‌্যাকেটের শক্তি ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও খেলোয়াড়দের জুতা, মোজা, ট্রাউজার প্রভৃতির স্থায়িত্ব বৃদ্ধি ও আরামপ্রদ করার জন্য ন্যানোটেকনোলজি (Nanotechnology) ব্যবহৃত হয়।

বাতাস পরিশোধনে: শিল্পকারখানা হতে নির্গত ক্ষতিকারক ধোঁয়াকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অক্ষতিকারক গ্যাসে রূপান্তরের মাধ্যমে বাতাস পরিশোধন করতে পারে।

মহাকাশ অভিযানে: মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত বিভিন্ন নভোযানকে হালকা করে তৈরি করে জ্বালানির পরিমাণ কমাতে ন্যানো টেকনোনলজি ব্যবহৃত হয়।

কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরিতে: ন্যানোটেকনোলজি (Nanotechnology) ব্যবহার করে অনুভূতিসম্পন্ন কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করা সম্ভব।

টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরিতে: সানস্ক্রিন-এ ব্যবহৃত টিটানিয়াম ডাই-অক্সাইড তৈরির ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহৃত হয়।

 

ন্যানো প্রযুক্তির সুবিধা:

১. পানি বিশুদ্ধকরণে ন্যানো ম্যাটেরিয়ালসমূহকে ব্যবহার করা যায়।
২. মেটাল অক্সাইড ন্যানো-ওয়্যারসমূহকে কেমিক্যাল সেন্সর হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৩. সেলফ-অ্যাসেমব্লিং ক্ষমতাসম্পন্ন।
৪. ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগে উৎপাদিত ঔষধ “স্মার্ট ড্রাগ” ব্যবহার করে দ্রুত আরগ্য লাভ করা যায়।
৫. পণ্যের ওজন কমায়, দীর্ঘস্থায়িত্বতা দান করে এবং পানি প্রতিরোধী।
৬.ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
৭. খাবার সংরক্ষণ করা সহজ ও খাদ্যের গুনাগুন অটুট থাকে।

 

ন্যানো প্রযুক্তির অসুবিধা/ক্ষতিকারক দিক:

১. ন্যানোটেকনোলজি গবেষণা এবং প্রয়োগ অনেক ব্যয়সাপেক্ষে।
২. প্রচলিত শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ফর্মে এ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে অনেক কর্মহীন হয়ে যাবে।
৩. অনেক ন্যানো প্রডাক্টস মানুষের মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৪. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মারাত্মক যুদ্ধান্ত তৈরি করা সম্ভব বিধায় যুদ্ধক্ষেত্রে আরও ভয়াবহতার আশংকা করা হচ্ছে।
৫. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পানি এবং বায়ু দূষণ হতে পারে যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের প্রাণীদেও জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৬. ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপিক রেকর্ডিং ডিভাইস তৈরি করা যাবে যা সাধারণ চোখে দেখা যাবে না। এতে করে মানুষের প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি বিঘ্নিত হবে।
৭. এ প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার বিরাট ক্ষতি করতে পারে।

 

 

প্রথম অধ্যায় লেকচার-১৮: জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)



Written by:

Habibur Rahman(Habib Sir)
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *