নেটওয়ার্ক ডিভাইস(Network Devices)
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক ডিভাইস প্রয়োজন হয়ে থাকে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় তাকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বলে। যেমন-
১.মডেম(Modem)
২.হাব(Hub)
৩.সুইচ(Switch)
৪.রাউটার(Router)
৫.রিপিটার(Repeater)
৬.ব্রিজ(Bridge)
৭.গেটওয়ে(Gateway)
৮.এনআইসি(Network interface Card-NIC) ইত্যাদি।
মডেম(Modem)
যে যন্ত্র বা ডিভাইস মডুলেশন ও ডিমডুলেশন পদ্ধতিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে টেলিফোন লাইনের সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদান করে তাকে মডেম(Modem) বলে। Modulation শব্দের Mo এবং Demodulation শব্দের Dem নিয়ে Modem শব্দটি গঠিত হয়েছে। Modem এর কাজ হলো ডিজিটাল সিগন্যালকে এনালগে পরিনত করা এবং এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটালে রুপান্তর করা।
এভাবে, ডিজিটাল সিগন্যালকে এনালগে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে মডুলেশন বলে ।
এবং এনালগ সিগন্যালকে ডিজিটালে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়াকে ডিমডুলেশন বলে ।
Modem এর প্রকারভেদ
সংযোগ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মডেমকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-
১.ইন্টারন্যাল মডেম(Internal Modem)
২.এক্সটারন্যাল মডেম(External Modem)
ইন্টারন্যাল মডেম(Internal Modem): ইন্টারন্যাল মডেম মূলত একটি কার্ড বিশেষ। এই কার্ড কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের স্লটে লাগাতে হয়।
এক্সটারন্যাল মডেম(External Modem): যে মডেম তারের সাহায্যে বা তারবিহীনভাবে কম্পিউটারের বাইরে থেকে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করা হয় তাকে এক্সটারন্যাল মডেম বলে। এ মডেমের গতি ও মূল্য ইন্টারন্যাল মডেমের চেয়ে বেশি থাকে।
হাব(Hub)
যে ডিভাইসের সাহায্যে নেটওয়ার্কের কম্পিউটারসমূহ পরস্পরের সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে যুক্ত থাকে তাকে হাব বলে। হাবের মধ্যে অনেক পোর্ট থাকে। একটি হাবে কতগুলো কম্পিউটার/ ডিভাইস যুক্ত করা যাবে তা হাবের পোর্টের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। হাব ৪ পোর্ট, ৮ পোর্ট এবং ১৬ পোর্ট বিশিষ্ট হয়ে থাকে। স্টার টপোলজিতে হাব কেন্দ্রীয় ডিভাইস হিসেবে কাজ করে। হাব প্রেরক থেকে প্রাপ্ত ডেটা সকল পোর্টে পাঠিয়ে থাকে।
Hub এর প্রকারভেদ:
কার্যকারিতার দিক থেকে Hub দুই প্রকার। যথা-
১.সক্রিয় হাব(Active Hub): যে হাব সংকেতের মানকে বৃদ্ধি করে এবং মূল সংকেত থেকে অপ্রয়োজনীয় সংকেত বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় সংকেত প্রেরণ করে,তাকে সক্রিয় হাব বলে।
২.নিস্ক্রিয় হাব(Passive Hub): যে হাব সংকেতের মানকে বৃদ্ধি করে না শুধুমাত্র কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে সহায়তা করে, তাকে নিস্ক্রিয় হাব বলে। নিস্ক্রিয় হাব একটিভ ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হয়।
Hub এর সুবিধা:
১.অন্যান্য ডিভাইসের তুলনায় দামে সস্তা।
২.বিভিন্ন ধরনের মিডিয়াকে সংযুক্ত করে থাকে।
৩.নেটওয়ার্কের পরিধিকে বাড়াতে পারে।
Hub এর অসুবিধা:
১.ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা থাকে।
২.নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।
৩.ডেটা ফিল্টারিং সম্ভব হয় না।
Hub এর ব্যবহার:
১.নেটওয়ার্কের কার্যক্রম মনিটরিং করতে।
২.মনিটর,স্ক্যানার,প্রিন্টার প্রভৃত্তি সকলের জন্য ব্যবহারের সুবিধা দিতে হাব ব্যবহৃত হয়।
সুইচ(Switch)
সুইচ হলো বহু পোর্টবিশিষ্ট একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যার সাহায্যে নেটওয়ার্কের কম্পিউটারসমূহ পরস্পরের সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে যুক্ত থাকে। একটি সুইচে কতোগুলো ডিভাইস যুক্ত করা যাবে তা সুইচের পোর্ট সংখ্যার উপর নির্ভর করে। সুইচে পোর্টের সংখ্যা ৮, ১৬,২৪ থেকে ৪৮ পর্যন্ত হতে পারে। LAN তৈরির ক্ষেত্রে হাবের চেয়ে সুইচ বেশি ব্যবহৃত হয়। স্টার টপোলজির ক্ষেত্রে সুইচ হচ্ছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস।
সুইচ প্রেরক থেকে প্রাপ্ত ডেটা সকল পোর্টে না পাঠিয়ে নির্দিষ্ট পোর্টে পাঠিয়ে থাকে।
Switch এর সুবিধা:
১.ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কমায়।
২.ভার্চুয়াল ল্যান ব্যবহার করে ব্রডকাস্ট নিয়ন্ত্রন করা যায়।
Switch এর অসুবিধা:
১.সুইচের মূল্য হাবের তুলনায় বেশি।
২.কনফিগারেশন পদ্ধতি জটিল।
হাব ও সুইচ এর পার্থক্য
হাব(Hub) | সুইচ(Switch) |
১.হাব প্রেরক থেকে প্রাপ্ত ডেটা সকল পোর্টে পাঠিয়ে থাকে। | ১.সুইচ প্রেরক থেকে প্রাপ্ত ডেটা সকল পোর্টে না পাঠিয়ে নির্দিষ্ট পোর্টে পাঠিয়ে থাকে। |
২.হাবের পোর্ট কম থাকে। | ২.সুইচ এর পোর্ট বেশি থাকে। |
৩.দাম কম। | ৩.তুলনামূলকভাবে দাম বেশি। |
৪.হাবের মাধ্যমে সময় বেশি লাগে। | ৪.সুইচ এর মাধ্যমে সময় কম লাগে। |
৫.হাবের ডেটা ট্রান্সমিশন হাফ-ডুপ্লেক্স। | ৫.সুইচ এর ডেটা ট্রান্সমিশন ফুল-ডুপ্লেক্স। |
৬.হাব বুদ্ধিমান ডিভাইস নয়। | ৬.সুইচ বুদ্ধিমান ডিভাইস। |
রাউটার(Router)
যে বুদ্ধিমান নেটওয়ার্ক ডিভাইসটি একই প্রোটোকল বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে তাকে রাউটার বলে। হাব ও সুইচ একাধিক কম্পিউটারকে একত্রে সংযুক্ত করে একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে আর রাউটার একাধিক নেটওয়ার্ককে পরস্পর সংযুক্ত করে। এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডেটা পাঠানোর প্রক্রিয়াকে রাউটিং বলে। রাউটার একাধিক পথ তৈরি করে ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্ক যেমন-ইথারনেট, টোকেন, রিং ইত্যাদিকে সংযুক্ত করতে পারে।
রাউটারের সুবিধা:
১.ডেটা ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্ভাবনা কমায়।
২.ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্ক যেমন-ইথারনেট, টোকেন, রিং ইত্যাদিকে সংযুক্ত করতে পারে।
৩.একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে সম্প্রসারিত করে।
৪. রাউটার ডেটা ফিল্টারিং করতে পারে।
৫.LAN ও WAN উভয় পরিবেশে ব্যবহার করা যায়।
রাউটারের অসুবিধা:
১.রাউটারের দাম বেশি।
২.এর গতি তুলনামূলক কম।
৩.রাউটার কনফিগারেশন তুলনামূলকভাবে জটিল।
৪.একই প্রোটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ক ছাড়া সংযুক্ত করতে পারে না।
রিপিটার(Repeater)
নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত কম্পিউটারের দূরত্ব বেশি হলে ক্যাবলে প্রবাহিত সিগন্যাল দূর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য প্রবাহিত সিগন্যালকে পূনরায় শক্তিশালী এবং আরো অধিক দূরত্বে অতিক্রম করার জন্য যে ডিভাইস ব্যবহৃত তাকে রিপিটার বলে। নেটওয়ার্ক সংযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর জন্য রিপিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রিপিটার ২ পোর্ট বিশিষ্ট হয়ে থাকে। রিপিটার হিসেবে হাব বা সুইচ ব্যবহার করেও ডেটা ট্রান্সমিশনে দূর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী করা যায়।
রিপিটার এর সুবিধা:
১.নেটওয়ার্ক সংযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি করে।
২.দূরত্ব বেশি হলে ক্যাবলে প্রবাহিত সিগন্যাল দূর্বল হয়ে পড়লে রিপিটার দূর্বল সিগন্যালকে সবল করে।
৩.নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বৃদ্ধি না করে ডেটাকে অ্যাম্লিফাই বা শক্তিশালী করে সামনের দিকে প্রেরণ করা যায়।
রিপিটার এর অসুবিধা:
১.এর গতি তুলনামূলক কম।
২.ডেটা ট্রান্সমিশনে বাধার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩.স্বল্প সংখ্যক কম্পিউটার সংযুক্ত করা যায়।
ব্রিজ(Bridge)
একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক গঠনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের ডিভাইসকে ব্রিজ বলে। ব্রিজ হাব বা সুইচের মতোই কাজ করে। তবে হাব বা সুইচ একই নেটওয়ার্কের বিভিন্ন নোডকে সংযুক্ত করে। পক্ষান্তরে ব্রিজ একাধিক ছোট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি করে। ব্রিজ ভিন্ন মাধ্যম বা ভিন্ন কাঠামো বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে পারে। কিন্তু ভিন্ন প্রোটোকল বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে পারে না।
ব্রিজ ৩ ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
১.লোকাল ব্রিজ: এটি সরাসরি ল্যান এর সাথে সংযুক্ত থাকে।
২.রিমোট ব্রিজ: ভৌগোলিক বিচ্ছিন্ন দুটি ল্যান সংযুক্ত করে ওয়ান তৈরির ক্ষেত্রে এ ব্রিজ ব্যবহৃত হয়।
৩.ওয়্যারলেস ব্রিজ: একাধিক ল্যান বা ল্যান এর দূরবর্তী স্টেশনকে সংযুক্ত করার জন্য ওয়্যারলেস ব্রিজ ব্যবহৃত হয়।
ব্রিজ এর সুবিধা: ভিন্ন মাধ্যম বা কাঠামো বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে পারে।
ব্রিজ এর অসুবিধা: ভিন্ন প্রোটোকল বিশিষ্ট একাধিক নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে পারে না।
ব্রিজ এর ব্যবহার: একাধিক ছোট ছোট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করে একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
গেটওয়ে(Gateway)
যে নেটওয়ার্ক ডিভাইস ভিন্ন প্রোটোকল বিশিষ্ট দুই বা ততোধিক নেটওয়ার্ককে (LAN,MAN,WAN) সংযুক্ত করে WAN তৈরি করে তাকে গেটওয়ে বলে।
গেটওয়ে এর সুবিধা:
১.ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বাধার সম্ভাবনা কম।
২.রাউটারের চেয়ে এর গতি বেশি।
৩.ভিন্ন প্রোটোকল বিশিষ্ট নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে পারে।
গেটওয়ে এর অসুবিধা:
১.এটি ধীরগতি সম্পন্ন।
২.অন্যান্য ডিভাইসের চেয়ে ব্যয়বহুল।
৩.কনফিগারেশন তুলনামূলকভাবে জটিল।
এনআইসি(Network interface Card-NIC)
NIC এর পূর্ণরুপ হচ্ছে Network interface Card । কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কভুক্ত করার জন্য যে প্লাগ-ইন কার্ড ব্যবহার করা হয় সেটিকে নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড বা ল্যান কার্ড বা নেটওয়ার্ক এডাপ্টার বলে। নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে ডেটা পাঠাতে বা গ্রহণ করতে এই ল্যান কার্ড প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ডিভাইসের মাদারবোর্ডের সাথেই এই ল্যান কার্ড সংযুক্ত থাকে বিধায় এর ব্যবহার বিলুপ্তির পথে।
শিক্ষার্থীর কাজ: নেটওয়ার্কের কাজ খাতায় লেখ।(পূর্বের লেকচার থেকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ব্যবহার/উদ্দেশ্য থেকে সাহায্য নাও)
Written by:
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284
Very good