দ্বিতীয় অধ্যায় লেকচার-১২: নেটওয়ার্ক টপোলজি (Network Topology)

Network Topology

নেটওয়ার্ক টপোলজি (Network Topology)

একটি নেওয়ার্কের ফিজিক্যাল ডিভাইস বা কম্পোনেন্ট যেমন-ক্যাবল, পিসি, রাউটার ইত্যাদি যেভাবে নেটওয়ার্কে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে Network Topology বলে।

 

নেটওয়ার্ক টপোলজির প্রকারভেদ :

কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং এর জন্য ছয় ধরনের টপোলজি ব্যবহার করা হয়। যথা-
১.বাস টপোলজি(Bus Topology)
২.রিং টপোলজি(Ring Topology)
৩.স্টার টপোলজি(Star Topology)
৪.ট্রি টপোলজি(Tree Topology)
৫.মেশ টপোলজি(Mesh Topology)
৬.হাইব্রিড টপোলজি(Hybrid Topology)

 

বাস টপোলজি(Bus Topology)

যে টপোলজিতে একটি মূল তারের সাথে সবকয়টি ওয়ার্কস্টেশন বা কম্পিউটার সংযুক্ত থাকে তাকে বাস টপোলজি বলে। বাস টপোলজির প্রধান ক্যাবলটিকে বলা হয় ব্যাকবোন ক্যাবল। বাস টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার মূল ক্যাবলের সাথে সংযুক্ত থাকে। নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় যখন কোন ডেটা স্থানান্তর করা হয় তখন এ ডেটা সিগন্যাল আকারে মূল তারে চলাচল করে। শুধু প্রাপক কম্পিউটার ডেটাটি গ্রহণ করে এবং বাকিগুলো অগ্রাহ্য করে। টপোলজির কোন কম্পিউটার নষ্ট হলে সম্পূর্ণ সিস্টেমের উপর কোন প্রভাব পড়ে না বা সম্পূর্ণ সিস্টেম নষ্ট হয় না। নতুন কম্পিউটার সংযোগের প্রয়োজন হলে মূল বাসের(ব্যাকবোন ক্যাবল) সাথে সংযোগ দিলেই হয়, সিস্টেম পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় না। কম্পিউটার ল্যাবে স্বল্প ব্যয়ে ব্যবহারের জন্য বাস টপোলজি উত্তম। নিচে এর সুবিধা ও অসুবিধা দেওয়া হলো-

বাস টপোলজি এর সুবিধা:
১.বাস টপোলজি ছোট নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ব্যবহার সহজ ও বিশ্বস্ত।
২.অল্প ক্যবলের প্রয়োজন হয়, ফলে খরচ কম পড়ে।
৩.কোন কম্পিউটার নষ্ট হলে সম্পূর্ণ সিস্টেম নষ্ট হয় না।
৪.নতুন কম্পিউটার সংযোগ করলে বা সরিয়ে নিলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ব্যাহত হয় না।
৫.প্রয়োজনে রিপিটার ব্যবহার করে এ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা যায়।

বাস টপোলজি এর অসুবিধা:
১.ডেটা ট্রান্সমিশনের গতি কম।
২.ত্রুটি নির্নয় বেশ জটিল।
৩.কম্পিউটারের সংখ্যা বেশি হলে ডেটা ট্রান্সমিশন বিঘ্নিত হয়।
৪.মূল ক্যাবলের একটিমাত্র স্থানে সৃষ্ট ত্রুটি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ককে অচল করে দিতে পারে।
৫.প্রচুর ব্যান্ডউইথ নষ্ট হয়।

 

রিং টপোলজি(Ring Topology)

যে টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার তার পার্শ্ববর্তী কম্পিউটারের সাথে ক্যাবল দ্বারা রিং এর মতো করে সংযুক্ত করা হয় তাকে রিং টপোলজি বলে। কম্পিউটারগুলো এমনভাবে সংযুক্ত করা হয় যাতে সর্বশেষ কম্পিউটারটি প্রথম কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থাকে। এ ব্যবস্থায় কোন কম্পিউটার ডেটা পাঠালে তা বৃত্তাকার পথে কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ না নির্দিষ্ট কম্পিউটার ডেটা গ্রহণ করে। রিং টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান।

রিং টপোলজির সুবিধা:
১.কেন্দ্রীয় কম্পিউটার বা সার্ভারের প্রয়োজন হয় না।
২.প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান।
৩.কম্পিউটার সংখ্যা বাড়লেও এর দক্ষতা খুব বেশি প্রভাবিত হয় না।

রিং টপোলজির অসুবিধা:
১.কোন কম্পিউটার নষ্ট হলে পুরা সিস্টেম অচল হয়ে যায়।
২.কোন সমস্যা নির্নয় করা বেশ জটিল।
৩.নেটওয়ার্কে কোন কম্পিউটার যুক্ত করলে বা সরিয়ে নিলে পুরা কার্যক্রম ব্যাহত করে।

 

স্টার টপোলজি(Star Topology)

যে টপোলজিতে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রনকারী ডিভাইসের (হাব বা সুইচ) সাথে সবগুলো কম্পিউটার সংযুক্ত করে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তাকে স্টার টপোলজি বলে। এক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার কেন্দ্রীয় ডিভাইসের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। কোন কম্পিউটার ডেটা ট্রান্সফার করতে চাইলে তা প্রথমে কেন্দ্রীয় হাব বা সুইচে পাঠিয়ে দেয়, এরপর হাব বা সুইচ সে ডেটা/সিগন্যালকে গ্রাহক কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেয়। হাব এর ক্ষমতা যত বেশি হবে নেটওয়ার্কে তত বেশি কম্পিউটার সংযোগ দেওয়া যাবে। হাব ব্যবহার করলে সংকেত সব কম্পিউটারে যায় এবং সুইচ ব্যবহার করলে সংকেত শুধু নির্দিষ্ট গ্রাহক কম্পিউটারে যায়।

স্টার টপোলজির সুবিধা:
১.কোন কম্পিউটার নষ্ট হলে পুরা সিস্টেম এর উপর কোন প্রভাব পড়ে না।
২.একই নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ক্যাবল ব্যবহার করা যায়।
৩.ডেটা ট্রান্সমিশন গতি বেশি।
৪.কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় বিধায় ত্রুটি নির্নয় সহজ।
৫.নতুন কম্পিউটার সংযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হলে শুধু হাব বা সুইচের সাথে সংযোগ দিলেই হয়।

স্টার টপোলজির অসুবিধা:
১.হাব বা সুইচ নষ্ট হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অচল হয়ে যায়।
২.কম্পিউটারের সংখ্যা বেশি হলে ডেটা ট্রান্সমিশন গতি কমে যায়।
৩.প্রতিটি কম্পিউটারকে কেন্দ্রীয়ভাবে সংযোগ দিতে প্রচুর ক্যাবল প্রয়োজন হয়, তাই এটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।

 

ট্রি টপোলজি(Tree Topology)

যে টপোলজিতে কম্পিউটারগুলো পরস্পরের সাথে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো বিন্যস্ত থাকে তাকে ট্রি টপোলজি বলে। ট্রি টপোলজি মূলত স্টার টপোলজির সম্প্রসারিত রুপ। ট্রি টপোলজিতে এক বা একাধিক স্তরের কম্পিউটার হোস্ট কম্পিউটার/ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকে। দ্বিতীয় স্তরের কম্পিউটারগুলো তৃতীয় স্তরের কম্পিউটারের হোস্ট কম্পিউটার হিসেবে কাজ করে। হোস্ট হিসেবে সুইচ/হাব ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত ক্লায়েন্ট সার্ভার নেটওয়ার্কের জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ এবং অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ টপোলজি বেশ উপযোগী। একাধিক হাব বা সুইচ ব্যবহারের মাধ্যমে শাখা-প্রশাখা তৈরির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সহজ।

ট্রি টপোলজির সুবিধা:
১.অফিস ব্যবস্থাপনার কাজে এ টপোলজি বেশ উপযোগী।
২.শাখা-প্রশাখা তৈরির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা সহজ।
৩.নতুন কোন কম্পিউটার সংযোগ বা বাদ দিলে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় না।
৪.ট্রি টপোলজিতে ত্রুটি সনাক্তকরণ এবং সংশোধন খুব সহজ।
৫.নেটওয়ার্কের কোন নোড বা শাখা নষ্ট হলে, সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয় না।

ট্রি টপোলজির অসুবিধা:
১.রুট বা সার্ভার কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে যায়।
২.ট্রি টপোলজির গঠন প্রক্রিয়া জটিল প্রকৃতির।
৩.বাস্তবায়ন খরচ তুলনামূলক বেশি।

 

মেশ টপোলজি(Mesh Topology)

যে টপোলজিতে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে তাকে মেশ টপোলজি বলে। রিং টপোলজির প্রতিটি কম্পিউটারকে প্রতিটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করে মেশ টপোলজি তৈরি করা যায়। এ টপোলজিতে প্রতিটি কম্পিউটার সরাসরি যে কোন কম্পিউটারে ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে। কম্পিউটারগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সংযোগকে
পয়েন্ট টু পয়েন্ট লিংক বলে। একটি মেশ টপোলজিতে ৪ টি কম্পিউটার থাকলে সংযোগ তারের সংখ্যা হবে ৬টি। আবার কম্পিউটার(নোড) সংখ্যা যদি হয় ৫ টি তাহলে সংযোগ তারের সংখ্যা হবে ১০টি। এভাবে যে কোন সংখ্যক কম্পিউটার নিয়ে গঠিত মেশ টপোলজির সংযোগ তারের সংখ্যা বের করা যায়, তবে এক্ষেত্রে সংযোগ তারের সংখ্যা বের করার সূত্র হলো n(n-1)/2 (এখানে n=নোড বা কম্পিউটারের সংখ্যা)।

মেশ টপোলজির সুবিধা:
১.ডেটা ট্রান্সমিশন দ্রুতগতিতে হয়ে থাকে।
২.যে কোন কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে পুরা সিস্টেম অচল হয়ে যায় না।
৩.ডেটা কমিউনিকেশনের নিশ্চয়তা বেশি থাকে।
৪.নেটওয়ার্কের সমস্যা সমাধান করা অনেক সহজ।
৫.এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সরাসরি ডেটা স্থানান্তর করা যায়।

মেশ টপোলজির অসুবিধা:
১.অতিরিক্ত লিংক স্থাপন করতে হয় তাই খরচ বেশি।
২.নেটওয়ার্ক ইনস্টলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল।

 

হাইব্রিড টপোলজি(Hybrid Topology)

বিভিন্ন টপোলজির সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ক টপোলজিকে হাইব্রিড টপোলজি বলে। যেমন বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকের একটি শাখায় যদি রিং টপোলজি ব্যবহৃত হয় এবং অন্য আরেকটি শাখায় যদি বাস টপোলজি ব্যবহৃত হয় তাহলে এদের এই দুটি টপোলজিকে সংযুক্ত করার ফলে যে টপোলজি তৈরি হবে সেটিই হাইব্রিড টপোলজি। এছাড়া হাইব্রিড টপোলজির উল্লেখযোগ্য একটি উদাহরণ হলো-ইন্টারনেট। কেননা এতে প্রায় সব ধরনের নেটওয়ার্ক সংযুক্ত আছে। হাইব্রিড টপোলজিতে ব্যবহৃত হতে পারে বাস, রিং, স্টার, মেশ ও ট্রি টপোলজি।

হাইব্রিড টপোলজির সুবিধা:
১.এ টপোলজিতে প্রয়োজন অনুযায়ী নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা যায়।
২.হাইব্রিড টপোলজিতে নেটওয়ার্কের সমস্যা নির্নয় করা সহজ।
৩.কোন কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে পুরা নেটওয়ার্ক নষ্ট না হয়ে আংশিক নষ্ট হয়।
৪.হাইব্রিড টপোলজি বড় আকারের নেটওয়ার্কের জন্য সুবিধাজনক।

হাইব্রিড টপোলজির অসুবিধা:
১.হাইব্রিড টপোলজিতে ব্যবহৃত হাব সর্বদা সচল রাখতে হয়।
২.নেটওয়ার্ক স্থাপন জটিল ও ব্যয়বহুল।
৩.হাব সর্বদা সচল রাখার কারনে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।

 

দ্বিতীয় অধ্যায় লেকচার-১১: নেটওয়ার্ক ডিভাইস(Network Devices)



Written by:

Habibur Rahman(Habib Sir)
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284

1 Comment.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *