ভার্চুয়াল রিয়েলিটি(virtual reality)
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির(virtual reality)পরিচয় :
প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় তবে বাস্তবের ন্যায় চেতনা বা ধারনা সৃষ্টি করতে সক্ষম এমন কল্পনা নির্ভর বিষয় অনুভব করার ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (virtual reality) বা কল্প-বাস্তবতা বলে। ১৯৮০ সালের দিকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি(virtual reality) শব্দটি সর্বপ্রথম জেরন লেনিয়ারের (Jaron Lanier) ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় । ভার্চুয়াল রিয়েলিটি(virtual reality) মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিমুলেশন ত্বথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরির মাধ্যমে অতি অসাধ্য কাজও করা সম্ভব হয়ে থাকে। উন্নত বিশ্বে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (virtual reality) পদ্ধতি ব্যবহার করে ড্রাইভিং শেখা, ডাক্তারি শেখা, বিমান চালনা শেখা, যুদ্ধ প্রশিক্ষনসহ অন্যান্য বিভিন্ন শিক্ষামূলক কাজ করা হয়। এতে ব্যবহৃত সফটওয়্যারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-Vizard, VRToolKit, Maya, 3D Studio Max ইত্যাদি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (virtual reality) উপাদানসমূহ
হেড মাউন্টেন্ড ডিসপ্লে বা ইফেক্টর: ইফেক্টর হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহৃত এক বিশেষ ধরনের ইন্টারফেস ডিভাইস। এটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশের সাথে ব্যবহারকারীকে সংযুক্ত করে থাকে।
ডেটা গ্লোভস: ডেটা গ্লোভস্ প্রয়োজনীয় কমান্ড দিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং এটি স্পর্শের অনুভূতি প্রদান করে।
বডি স্যুইটঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বডি স্যুইটে ব্যবহৃত সেন্সরগুলো থেকে সিমুলেশন প্রোগ্রামে অনবরত ডেটা পাঠাতে থাকে এবং সেই অনুযায়ী সামনের স্ক্রিনে পরিবর্তন আনে।
রিয়েলিটি সিমুলেটরঃ রিয়েলিটি সিমুলেটর এক ধরনের হার্ডওয়্যার যা ইফেক্টরকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন-বিভিন্ন ধরনের সেন্সর, অডিও বা ভিডিও প্রসেসিং ডিভাইস, রিয়েলিটি ইঞ্জিন ইত্যাদি।
অ্যাপ্লিকেশনঃ অ্যাপ্লিকেশন হলো একধরনের সিমুলেশন, মডেলিং ও গ্রাফিক্স সফটওয়্যার। এটি বিভিন্ন সিনেমা এবং ভিডিও গেমসে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
জিওমেট্রিঃ জিওমেট্রি হলো ভার্চুয়াল পরিবেশের বিভিন্ন বস্তুর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত তথ্যসমূহ। মূলত কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন বা ক্যাড সফটওয়্যার দিয়ে জিওমেট্রি তৈরি করা হয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (virtual reality) প্রযুক্তিতে গুরুত্বের সাথে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় সেগুলো হলো-
শব্দ: ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে শব্দ কোনো বিশেষ স্থান থেকে উৎসারিত এবং ডায়নামিক বা পরিবর্তনশীল বলে মনে হয়। এর কারণ এই প্রযুক্তিতে ত্রিমাত্রিক শব্দ যুক্ত করা হয় যাতে করে শব্দের কারণে এক ধরনের পরাবাস্তব ত্রিমাত্রিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
দৃষ্টি: এই পদ্ধতিতে বহুমাত্রিক ডিসপ্লে ব্যবহৃত হয়। এতে ছোট আকারের পর্দা থাকে যা গগলস অথবা হেলমেটের মধ্যে রাখা সম্ভব। এতে করে ব্যবহারকারী একেবারে বাস্তবের ন্যায় অথচ পরাবাস্তব (কল্পবাস্তব) দৃশ্য অবলোকনে সক্ষম হয়।
মস্তিষ্ক: মানুষের মস্তিষ্কের এবং আচরণের ওপর পরিচালিত গবেষণা কম্পিউটার জেনারেটেড ওয়ার্ল্ডকে নতুন উপহার দিয়েছে , যার সাহায্যে তথ্যকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যায় এবং কৃত্রিমভাবে তার অনুভূতি মস্তিষ্কের জন্য প্রেরণ করা সম্ভব হয়ে থাকে। পাঠ্যপুস্তক পড়ার চেয়ে মস্তিস্ক প্রেরিত তথ্যকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে; যা দেখা যায়, শোনা যায় এবং স্পর্শ করা যায়।
স্পর্শ: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের জুতা, গ্লাভস্ বা শরীরের বিশেষায়িত পোশাক একজন ব্যক্তিকে কৃত্রিমভাবে প্রকৃত বাস্তবের ন্যায় অবস্থার কাছাকাছি নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
টেলিপ্রিজেন্স: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক দূর থেকে কাজ পরিচালনার প্রক্রিয়াকে টেলিপ্রিজেন্স বলা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে টেলিপ্রিজেন্স প্রক্রিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। যেমন- এক্ষেত্রে বৈমানিকগণ আসল বিমান না চালিয়ে তার পরিবর্তে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশে হুবহু আসলের ন্যায় কৃত্রিম বিমান পরিচালনায় ট্রেনিং গ্রহণ করতে পারেন বা ড্রাইভারগণ কৃত্রিমভাবে তৈরি বাস্তব ন্যায় পরিবেশে প্রাক-ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির(virtual reality)ইতিবাচক প্রভাবসমূহ-
শিশু শিক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি(virtual reality):
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে শিশুদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে আকর্ষণীয়ভাবে শিক্ষা প্রদান করা যায়। বর্তমানে উন্নত বিশ্বে শিশুদের শিক্ষায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
চিকিৎসাক্ষেত্র এবং ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ:
উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণে ‘এমআইএসটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ল্যাপপরোস্কোপিক’ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ফলে অত্যন্ত সহজে ও সুবিধাজনক উপায়ে বাস্তবে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। জটিল সব অপারেশন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলোর গঠন ও কার্য পর্যালোচনা, ডিএনএ পর্যালোচনা প্রভৃতি সম্পর্কে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কল্যাণে ব্যাপকভাবে জানা ও গবেষণা চালানো সম্ভব। নবীন শল্য চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, রোগ নির্ণয় প্রভৃতি কাজের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করেন, যার ফলে মানসিক রোগীদের জীবন দর্শনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।
ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ড্রাইভিংয়ের নানা নিয়ম-কানুন খুব সহজেই আয়ত্ত করা সম্ভব। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাস্তবের মতো রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে প্রশিক্ষণার্থী খুব সহজেই বাস্তবে গাড়ি চালানোর সাহস অর্জন করে দ্রুত গাড়ি চালনা শিখতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশের মহিলা পুলিশদেরকে ড্রাইভিং শেখানোর জন্য ভার্চুয়াল কার ব্যবহার করা হয়।
বিমান চালনার প্রশিক্ষণ:
আমরা যদি উন্নত বিশ্বে দিকে লক্ষ করি তাহলে দেখবো যে, তাদের বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা কিংবা সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করছে। আর এর জন্য ফ্লাইট সিমুলেটর ব্যবহার করা হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ফ্লাইট সিমুলেশনের ক্ষেত্রে কম খরচে বিমান চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয়। ফ্লাইট সিমুলেশন হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে ব্যবহার করে বিশেষায়িত কম্পিউটার সিস্টেমসমূহের মাধ্যমে সিভিলিয়ান কিংবা মিলিটারি পাইলটদেরকে সত্যিকারের এয়ারক্র্যাফট ছাড়াই বিমাণ চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে চালকগণকে যদি তাদের গাড়ি চালনায় পারদর্শী করা হয়, তাহলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়। রেলপথ এবং জলপথে চলাচলকারী যানের ক্ষেত্রে একইভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ পদ্ধতিতে রেল চালককে রেল চালনার রুট, জরুরি মুহূর্তে করণীয় বিষয়াবলি পূর্বেই শেখানো যায়। জলযানের ক্ষেত্রে সঠিক গন্তব্যে সাবধানতার সাথে কীভাবে তা পরিচালনা করা যায় তার কাল্পনিক উপস্থাপনার মাধ্যমে যান চলাচলে গতিশীলতা সৃষ্টি করা সম্ভব। বন্দরে জলযানের সার্বিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।
সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ:
বিভিন্ন বিরুপ পরিবেশে শত্রুর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অত্যাধুনিক অনেক যুদ্ধান্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার, রাতে যুদ্ধ পরিচালনা, শত্রুর অবস্থান নির্ণয় ইত্যাদি কাজ নিখুঁতভাবে করার জন্য বর্তমানে অনেক দেশের সেনাবাহিনীতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্যবসায় বাণিজ্যে:
ব্যবসায়িক কোনো এনভায়রনমেন্টে ভার্চুয়াল ট্যুর, নতুন কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, কোন প্রোডাক্টের প্রোডাক্টের প্রদর্শন ইত্যাদি। অনেক ব্যবসায়ে অনেক কম মূল্যে কোন প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট এবং সার্ভিস প্রদানের জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মহাশূন্য অভিযানে:
মহাশূন্য অভিযানের প্রতিটি পর্বেই রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকিসমূহ। প্রস্তুতি পর্বের বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নভোচারীদের কার্যক্রম, নভোযান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে প্রশিক্ষণে তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। কাল্পনিক পরিবেশে মহাকাশে গবেষণা পরিচালনার বিষয়গুলো, মহাশূন্যে খাপ খাওয়ানোর মতো বিষয়গুলো পূর্বেই প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন নভোচারীগণ।
গেমস্ তৈরিতে:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে বর্তমানে বিভিন্ন আকর্ষণীয় গেমস্ তৈরি করা হচ্ছে। Xbox 360, PS2 এবং কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস্ রয়েছে। লিনডেন ল্যাবস কর্তৃক সেকেন্ড লাইফ, নিনটেনডো এর Wii এবং ইলেক্ট্রনিক আর্টস এর The Sims ইত্যাদি।
প্রকৌশল ও নগর উন্নয়নে:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রকৌশল বিভাগে ত্রিমাত্রিক মডেলিং টুলস এবং পরিকল্পনার নকশা দেখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রকৌশলীরা তাদের ত্রিমাত্রিক প্রকল্প দেখতে পারেন এবং কীভাবে প্রকল্পটি কাজ করবে তা ভালোভাবে বুঝতে পারেন। কোনো ডিজাইন চক্রের শুরুতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে কোনো ডিজাইনে ত্রæটি থাকলে সংশোধন করা যায়। নগর পরিকল্পনায় ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর প্রয়োগ ঘটিয়ে নগর উন্নয়ন রূপরেখা, নগর যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি সহজ ও আকর্ষণীভাবে বর্ণনা করা যায়।
শিল্প কারখানায়:
শিল্প কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও সিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইন কিংবা প্রয়োগসমূহের ভার্চুয়ালাইজেশন করা হয়। এর ফলে প্রকৃত উৎপাদন শুরুর পূর্বে পণ্যের ডিজাইনে কিংবা আউটপুটের যে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনের মাধ্যমে উৎপাদন সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
খেলাধুলা ও শরীরচর্চায়:
গলফ, অ্যাথলেটিক্স (শরীরচর্চা), স্কিটিং, সাইক্লিং ইত্যাদি খেলায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ট্রেনিং কিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শরীরচর্চায় দক্ষতা পরিমাপ, কৌশল বিশ্লেষণের কাজে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে খেলোয়াড়দের পোশাক, যন্ত্রপাতি এবং কৌশল নির্ধারণ করা যায়।
বিনোদন ও মিডিয়াক্ষেত্রে:
বিনোদনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে The Lawnmower Man, The Matrix, Tom (1982 version), The Thirteenth Floor, eXistenZ, Vanilla Sky ইত্যাদি। তাছাড়াও সংগীত, বই তৈরি, বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী ইত্যাদিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায়:
জাদুঘরে ব্যাপকভাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় যেমন কোনো প্রাচীন গুহা, ভাস্কর্য, ঐতিহাসিক ভবন, প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন প্রভৃতি প্রদর্শনে যাদুঘরে বা বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষণাতেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে যাদুঘরে যেমন আগত দর্শনার্থীরা এ সমস্ত বিষয়গুলো পরিদর্শনে জ্ঞান ও আনন্দ লাভ করতে পারেন তেমনি আধুনিক ঐতিহাসিক গবেষকরাও প্রাচীন পৃথিবী সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির(virtual reality) সুবিধা বা সুফল-
১.ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন কার্যক্রমে যৌক্তিকভাবে খরচ কমিয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব।
২.বাস্তবায়নের পূর্বেই পরিবেশ, পরিস্থিতি ও ফলাফলকে কৃত্রিমভাবে অনুভব করা যায় বিধায় তা অনেক অনাকাক্সিক্ষত, অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় ঘটনাকে রোধ করতে সক্ষম।
৩.যে কোনো শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে আকর্ষণীয়, হৃদয়গ্রাহী, বাস্তবসম্মত এবং সর্বোচ্চভাবে নিরাপদ করতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ যে কোনো প্রশিক্ষণে দুর্ঘটনা, প্রাণনাশ প্রভৃতির সম্ভাবনা শূন্যে নামিয়ে আনে।
৪.সামরিক প্রশিক্ষণ, মহড়া, কোনো উৎপাদিত ধ্বংসাত্মক পণ্যসমূহের মান যাচাইয়ের পরীক্ষাসমূহ বিষয়টি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হলে তা পরিবেশ দূষণ ও বিপর্যয় রোধ করে।
৫.ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন ব্যবস্থাকে সহজ ও ঝুঁকিহীন করে তোলে।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির(virtual reality) নেতিবাচক প্রভাব-
ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ব্যয় বৃদ্ধি এবং জটিলতাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সরঞ্জামাদির দাম অনেক চড়া হওয়ার কারণে সাধারণের মধ্যে এর প্রসার এবং জটিলতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্নতায় আছেন। অনেক সময় এর হ্যান্ডসেটের গতি ব্যবহারকারীর স্বাভাবিক গতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারে না।
কল্পনা নির্ভরতাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মানুষ তার কল্পনার রাজ্যে ইচ্ছেমতো বিচরণ করতে পারে। অনেক সময় ধরে কল্পনার জগতে থাকলে বাস্তবতা থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাবে। ফলে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসবে।
সাস্থ্যের ক্ষতিঃ বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এটি মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতি সাধন করে।
মনুষ্যত্বহীনতাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে মানুষ বাস্তবিকের চেয়ে ভালো পরিবেশ ও মনের মতো সঙ্গী পাবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষের পারস্পরিক ক্রিয়া হ্রাস পাবে এবং মনুষ্যত্বহীনতা বেড়ে যাবে। ফলে ক্রমেই মানব সমাজ বিলুপ্ত হতে থাকবে।
প্রথম অধ্যায়ের লেকচার-০৬: ই-কমার্স সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
Written by:
Author at www.habibictcare.com
Email:habibbzm2018@gmail.com
Cell: +8801712-128532,+8801913865284